Home অন্যান্য জামালপুরের অধিকাংশ বধ্যভূমি আজও অরক্ষিত

জামালপুরের অধিকাংশ বধ্যভূমি আজও অরক্ষিত

নুর এমডি চৌধুরী, সম্পাদক, বার্তা বাংলা ২৪ ডটকম

0

জামালপুর জেলায় ৫০০০ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন । এতে ৮১ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদৎ বরণ করেন, শহীদ হন প্রায় ১৪০ জন এবং প্রায় ৫০০ জন নিরীহ লোককে গণহত্যার শিকার হতে হয়েছে। তাছাড়া ৩০০ জন মহিলাকে নির্মম ভাবে নির্যাতন করা হয়। বেশীরভাগ যুদ্ধ সংগঠিত হয় ধানুয়া কামালপুর, নারায়নখোলা এবং সরিষাবাড়ীতে।

জামালপুর শহরের গণহত্যাঃ
দিনটি ছিল ২২এপ্রিল ১৯৭১ সাল। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জামালপুর শহরে ঢুকে পড়ে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী। প্রবেশকালে দিগপাইত থেকে পাথালিয়া পর্যন্ত প্রায় ২০কিলোমিটার রাস্তার দু পাশের ঘরবাড়ি, দোকানপাটে আগুনে ধরিয়ে দেয়, ভেঙে ফেলে মন্দির আর মন্দিরে থাকা প্রতিমা গুলো। গুলি করে মন্দিরের পুরোহিত ছাত্রনেতা আবদুল হালিমসহ ৭০-৭২ জন নিরস্ত্র মুক্তিকামী মানুষকে নির্বিকারে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন।

শহীদ নগর গণহত্যাঃ
সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের বারইপটল ও ফুলদহেরপাড়া গ্রামে ১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদারদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ ছাড়া ৬০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যাসহ শত শত মানুষকে আহত করে হানাদার ও স্থানীয় রাজাকার আলবদররা।

বকসীগঞ্জ গণকবরঃ
জামালপুরের বকসীগঞ্জ ইউনিয়নে অনেক গণকবর পাওয়া যায়। ১৯৭২ সালে কয়েকটি গণকবর থেকে লাশগুলো তুলে দাফন করা হয়। এসব কবর থেকে ৫০-৬০টি করে লাশ তোলা হয়। আরও কয়েকটি গণকবর দুর্গন্ধের কারণে সে সময় খোঁড়া যায়নি।ধনুয়া কামালপুর বাজারের পশ্চিমে ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে একটি বড় বধ্যভূমি বর্তমানে পুকুরে পরিণত হয়েছে। তাছাড়াও বকশীগঞ্জ এনএম উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পার্শ্বে ৭১এর মৃত্যুকূপ নামে পরিচিত বধ্যভূমিটিও সংরক্ষণের অভাবে এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। বকশীগঞ্জের পুরাতন গো-হাট এলাকায় একটি গণকবর সংরক্ষণের অভাবে আবাদি জমি ও পুকুরে পরিণত হয়েছে।

শ্মশানঘাট বধ্যভূমিঃ
জামালপুরের শ্মশানঘাটে চলত নিয়মিত গণহত্যা। এখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তার দোসররা মিলে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঙালিদের ধরে আনত এই শ্মশানঘাটে পরে তাঁদের গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন।

পিটিআই ক্যাম্প বধ্যভূমিঃ
জামালপুরের পিটিআই ক্যাম্পে শান্তি কমিটির সহযোগিতায় বিভিন্ন জায়গা থেকে নিরীহ বাঙালিদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে কখনো গুলি করে, আবার কখনো জবাই কিংবা আঘাত করে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন।

কলেজ ক্যাম্প বধ্যভূমিঃ
জামালপুরের কলেজ ক্যাম্পে রাজাকাররা অসংখ্য নিরস্ত্র-নিরপরাধ মানুষকে ধরে নিয়ে আসত। তাঁদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হতো।

রশিদপুর ঘাট বধ্যভূমিঃ
জামালপুরে রশিদপুর ঘাটের বধ্যভূমিতে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন।

শেরপুর কবরস্থান সংলগ্ন নদীর ঘাট বধ্যভূমিঃ
জামালপুরের শেরপুরের কবরস্থানের নিকট নদীর ঘাট বধ্যভূমিতে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন।

ইসলামপুর গোয়ালার ঘাট বধ্যভূমিঃ
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার গোয়লার ঘাটের বধ্যভূমিতে বহু নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন।

বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট বধ্যভূমিঃ
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটে অসংখ্য মানুষকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন।

পিয়ারপুর কবরস্থান বধ্যভূমিঃ
জামালপুরের পিয়ারপুর কবরস্থানের নিকট নদীর ঘাটের বধ্যভূমিতে অনেককে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন।

আশেক মাহমুদ কলেজ হোস্টেল বধ্যভূমিঃ
জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের স্নাতক হোস্টেল ছিল আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প। এখানে বহু লোককে ধরে এনে কলেজ এলাকাতেই জবাই করে হত্যা হয়েছিল সেদিন।

১৯৭১ সালেট পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের ইতিহাস স্মরণ করতে গেলেও শরীরটা শিহরিত হয়ে উঠে। কি মর্মান্তিক দিন গুলি গেছে। পাকেরা বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষদেরকে ধরে এনে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলছে। নির্বিচারে গুলি করে ও নানা উপায়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে সেই লাশ মাটিতে চাপা দিয়েছে।

এসব হত্যাকাণ্ডেরলোমহর্ষক স্মৃতি, মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস কালের বিবর্তনে যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। সংরক্ষণের অভাবে অসংখ্য গণকবর সনাক্ত করার পরও মর্যাদাহীন অবস্থায় পড়ে আছে আজও।

সরকারি তথ্য মতে, জামালপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় আনাচে কানাচে প্রায় অর্ধ শতাধিক বধ্যভূমি/গণকবর পড়ে আছে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version