গত বৃহস্পতির (৩০ জানুয়ারি) পূর্ব ঘোষণাক্রমে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা নামি-দামি কবি ও সাহিত্যিক ব্যক্তিবর্গ। উক্ত আনন্দ আয়োজন আড্ডাকে ঘীরে এতো এতো গুণীজনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় যা কিনা একটা ভিন্নমাত্রার আনন্দ আড্ডা আয়োজনের রুপ নিয়ে থাকে।
প্রতিক্ষণেই মনে হতে থাকে আহা! যদি এ আনন্দ আড্ডার কভু শেষ না হতো! প্রতিটা কবির কবিতা পাঠ যেন একটা নতুনত্বের ইমেজ যুক্ত করছিল এই আনন্দ আয়োজনে।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল শীতকে নিয়ে কবিতা পাঠ। প্রতিটি কবিতায় কবিদের অন্তর দৃষ্টিতে শীত যে কত রুপে আবির্ভূত হয়েছিল বিজ্ঞ কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠের মাধ্যমেই তা ফুটিয়ে তুলেছিলেন যা কিনা অভূতপূর্ব অনুভূতির প্রকাশ।
সর্বগুণে গুণান্নিত কবি নুর কামরুন্নাহার এর অসাধারণ জ্ঞানগর্ভ উপস্থাপনা, আর স্বরচিত কবিতা পাঠ প্রতিটি মূহুর্তে উপস্থিত সকলের অন্তর আত্মাকে আন্দোলিত করে তুলেছিল।
বরেণ্য কথা সাহিত্যিক রোকেয়া ইসলামের কঠিণ বাস্তবতার আদলে লেখা অণুগল্পটির নিজস্ব উপস্থাপনায় উপস্থিতি সকলের হৃদয়কে করেছিলেন মোহিত ও আন্দোলিত।
বৃহস্পতির আড্ডা মানেই নিজেকে উপস্থাপন করে বহুমাত্রিক প্রতিভার দিকে এগিয়ে নেবার এক অভিনব প্লাটফর্ম। দূর থেকে কতগুলো প্রাণ নিবিড় ভাবে কাছে আসার গল্প এক এক করে অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠে সাহিত্যের প্রেক্ষাগৃহ।
সেদিনের আয়োজনটিতে বিশেষ করে সকলের স্নেহাস্পদ কবি এম এইচ আলিম এর সুদুর বগুড়া থেকে নিয়ে আসে বগুড়ার বিখ্যাত দই এবং তার স্বরচিত স্বকন্ঠে দুলানো শীতের কবিতাটি যেন আনন্দের মাত্রাকে বহু মাত্রায় রুপান্তরিত করেছিল।
কবি কবিতা কস্তার কবিতায় শীতের নিবিড় আলিংগনের কথা তুলে ধরে স্বকন্ঠে একজন দক্ষ আবৃতি শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। অনুরূপ কবি চন্দ্রশীলা ছন্দা তার শীতকে নিবিড়ভাবে উপভোগ করার স্বরচিত কবিতা স্বকন্ঠে পাঠ উপস্থিতি সকল কবি মনে এক আনন্দের ঢেউ তুলেছিল।
কবি নিলুফা জামান এর অসাধারণ ভাবগাম্ভীর্যের কবিতা যেখানে লুকিয়ে আছে হাজারো আকুতির আল্পনা যা বিচক্ষণ কবির কবিতায় ফুঁটিয়ে তুলেছিলেন।
কবি রহিমা আক্তার মৌ এর কবিতাটিতে ছিল আনন্দ বিষাদের সামষ্টি। দারুণ ছিল প্রিয় কবির উপস্থাপনা। অসাধারণ শৈল্পিক কারুকাজে ফুঁটিয়ে তুলেছিলেন প্রিয় কবির কবিতা খানি। আনন্দ আড্ডায় যেসকল গুণী কবিগণ দারুণ দারুণ স্বরচিত কবিতা উপস্থাপন করেছিলেন,
কবি রোকেয়া মুন্নী, শামীম আরা, আবদুর রাজ্জাক, নাসরিন আকতার, নাসরিন সুলতানা, তাহমিনা শিল্পী, ইমন, খাতুনে জান্নাত, হাসিদা মুন, এম কামরুল হাসান, আমীর খশরু, বুলু সওল বৈরাগী, সাবেদ আল সাদ প্রমুখ।
পরিশেষে সকলের শ্রদ্ধাভাজন কবিবর যিনি বাংলা সাহিত্যের একজন নিরলস কর্মী, সাহিত্যের প্রতি যার অগাধ মমতববোধ বাংলা সাহিত্যকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে কবি ফারুক মাহমুদ। প্রিয় কবির দিক নির্দেশনামুলক বক্তব্য আর স্বরচিত কবিতা পাঠ উপস্থিত সকল কবিদের মনকে উজ্জীবিত করে তুলেছিল।
এরপর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। প্রিয় কবি ও লেখক নুর এমডি চৌধুরীর প্রথম গল্পগ্রন্থ ছোট ছোট দুঃখ কথার মোড়ক উন্মোচন করেন কবি ফারুক মাহমুদ। কবি ফারুক মাহমুদ এর হাত ধরে মঞ্চে সকল কবিদের শতস্ফুরত উপস্থিতিতে শেষ হয় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। শেষে গল্পগ্রন্থের প্রথম গল্প ‘পোস্ট মাস্টার’ থেকে কয়েক লাইন পাঠ করে শুনান কবি ও সাহিত্যিক অসংখ্য গুণে গুনান্নিত কবি, অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নুর কামরুন্নাহার।
এরপর শুরু হয় গানের আয়োজন। গানে গানে মুখরিত হয়ে উঠে বৃহস্পতির আড্ডা। যেন এক আনন্দ ভূবনে হারিয়ে যেতে থাকে সবে। মাঝে মধ্যে রোমান্টিকতার ছুয়া কিছু গান রবীন্দ্র সংগীত যেন আনন্দের মাত্রাকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।
এর আগেও বহুবার বৃহস্পতির আড্ডায় ভারত নেপাল থেকে আসা অসংখ্য কবিদের উপস্থিতি ঘটেছে। যা স্মৃতিপটে জমা করে রেখেছেন কবিগণ পরম শ্রদ্ধায়।
বৃহস্প্রতির আড্ডা মানেই আনন্দ আয়োজনের উপচে পড়া ভীড়। এ আড্ডার স্মৃতি চারণে প্রতিবারই উপস্থিত কবিগণ প্রতিমুহূর্তে আন্দোলিত হন। চমৎকারপ্রদ এই আনন্দ আয়োজনে উপস্থিত সবাই সবার সহিত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা বিনিময় করে অবশেষে আবারও ফের মিলিত হওয়ার প্রত্যাশায় বিদায় নেন।