Home অর্থনীতি ভিত্তি দুর্বল হলে স্থাপনা টেকে না

ভিত্তি দুর্বল হলে স্থাপনা টেকে না

কামরুল হাসান লেখক ও গবেষক || প্রভাষক ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি

0

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ২০২৪ সালের হেমন্ত সেমিস্টারের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে আজ তাঁর শিক্ষা জীবনের দুটি ঘটনা উল্লেখ করলেন।দুটি ঘটনাই তাঁর স্কুল পর্বের; প্রথমটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের, দ্বিতীয়টি উচ্চ বিদ্যালয়ের।

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন যখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র তখন বার্ষিক পরীক্ষায় মোট নম্বর ছিল ৩৫০। তিনি পেয়েছিলেন ৩৪৭ নম্বর। নম্বর দেখে শিক্ষকরা শুধু আনন্দিত নন, হতবাক হয়েছিলেন। দেরিতে ভর্তি হওয়ার জন্য তার রোল নম্বর ছিল পেছনে। পেছনের রোল নম্বরের ছেলেটি সবাইকে ছাড়িয়ে প্রথম শুধু নয় ৯৯% মার্ক পেয়ে একটি নতুন রেকর্ডই সৃষ্টি করলেন। ইংরেজি পড়াতেন মধুসূদন কর্মকার নামের একজন ছোটখাটো গড়নের শিক্ষক। অসম্ভব জ্ঞানী মানুষটি
দৈহিক গড়নে খর্বকায় হলেও জ্ঞানের বিচারে ছিলেন দীর্ঘকায়, ড. ফরাসউদ্দিনের ভাষায় ‘আকাশছোঁয়া’। ছাত্রের অসাধারণ রেজাল্ট দেখে তিনি ডাবল প্রমোশনের প্রস্তাব করলেন, ক্লাস থ্রি থেকে সরাসরি ক্লাস ফাইভে। সে সময় তাদের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন ফিজিক্সের অধ্যাপক জনাব আবুল হাশেম। তিনি ড. ফরাসউদ্দিনকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন, বলা যায় তার মেন্টর ছিলেন। তাঁর পরামর্শ চাওয়া হলে তিনি ডাবল প্রমোশনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন। তুখোড় ছাত্রটি ফাইভে নয়, উঠেছিল ক্লাস ফোরেই।ডাবল প্রমোশন নেয়নি।

হাইস্কুলে ইংরেজি পড়াতেন সুরুজ মিয়া নামের একজন শিক্ষক। সূর্যের মতোই টকটকে ছিল তার গায়ের রঙ, মুখের দিকে তাকালে এমনিতেই শ্রদ্ধায় মন ভরে যেত। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। দেরি করে ভর্তি হওয়ার জন্য ক্লাস সেভেনেও তার রোল নম্বর ছিল পেছন দিকে। প্রথম দিন পড়াতে এসে তিনি ছাত্রদের বললেন তোমাদের একটা ট্রান্সলেশন ধরব, দেখি কে পারো। প্রশ্নটি হলো, সেই ধ্রুপদী বাক্য- ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল।’ এক এক করে সবাইকে ধরলেন, প্রথম বেঞ্চের কেউ পারল না, দ্বিতীয় বেঞ্চের কেউ পারল না, এভাবে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ -কেউ পারল না। লাস্ট বেঞ্চিতে বসে থাকা শেষ ছাত্র ফরাসউদ্দিন অবলীলায় অনুবাদ করে দিলেন। তার কাছে প্রশ্নটি খুব সহজ মনে হয়েছিল। সহজ তো মনে হবেই, তিনি যে মধুসূদন কর্মকারের ছাত্র আর শৈশব থেকেই প্রচণ্ড সিরিয়াস পড়াশোনায়। শিক্ষক সুরুজ মিয়া তাকে আরও দুটি প্রশ্ন করেছিলেন তিনি ঝটপট সঠিক উত্তর দিয়েছিলেন। শিক্ষক ভীষণ ইমপ্রেসড, আনন্দে তিনি সিলেটি ভাষায় যা বলেছিলেন তার অর্থ হলো, কোন ছাগল তোমাকে পেছনের বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছে, তোমার স্থান তো সামনে। তুমি সামনে চলে আসো। সেই যে মেধাবী ছাত্রটিকে সামনে এনে বসালেন জীবনে আর কোনো ক্লাসে, আর কোনো পরীক্ষায় তাকে পেছনে যেতে হয়নি।

এ দুটো ঘটনার মধ্য দিয়ে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন যে বিষয়টি বোঝাতে চাইলেন তা হলো- শিক্ষকগণ জীবন গড়ে দেন। আর শিক্ষাজীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা। ভিত্তি নড়বড়ে হলে প্রাসাদ টিকে না।

পুনশ্চ : বিদেশের উদাহরণ টেনে তিনি বললেন, এ কারণেই বিদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এত কদর করা হয়, তাদের মাইনেও বেশি।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version