আজ বার্তা বাংলাদেশ২৪ এর সম্পাদক নুর এমডি চৌধুরী ও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মাহফুজা খানম দম্পত্তির প্রথম সন্তান নুরজাহান এর ২৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী।
অকাল প্রয়াত প্রিয় সন্তানের রেখে যাওয়া স্মৃতি স্মরণে বাবা নুর এমডি চৌধুরী তার ফেইজবুকে লিখেন:
বার্ডেম এর ১৪ তলা। সবে মাত্র ইনকিউবেটরে রেখেছে বেবীকে। আমি দেখার জন্য উদগ্রীব। একজন নার্সকে বললাম, শুনেন, আমি বেবী থ্রীর বাবা। কেমন আছে বেবীটা। একটু আগে কাপড় পরানো হয়েছে। আপাতত ভালো আছে।
আমাকে একটু দেখতে দিবেন। আচ্ছা একটু দাঁড়ান। আমি একটু না অনেক্ক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। দেখছি আরেকটা বেবীকে কাপড় পরানো হচ্ছে।
নার্স মানে জানতাম সেবা করেন তারা। সেদিন সেই নার্সটার বেবীকে কাপড় পড়ানো দেখে আমার সেই বিশ্বাস টুকু নষ্ট হয়ে গেছে। এতটুকুন বেবী পাখির ছানার মত কিভাবে আছড়াচ্ছে আর গালমন্দ করছে। বাবা ডাক্তার মা ডাক্তার এসবের পেটে এমন বাচ্চা ক্যান। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি ওসব দেখছিলাম আর নার্ভাস ফিল করছিলাম। আরেকজন নার্সকে দেখে ঈশারা করলাম, এই যে আপু শুনেন, সে যথারীতি দরজার কাছে এলো। বললাম, আমাকেতো বেবী থ্রির কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। জানতে চাইলো আপনি বেবীর কি হন? বললাম বাবা। একটু রেগেই হয়ত বলল, বেবী থ্রির বাবা কয়টা? এর আগে দুই বাবা এসে গেলো।
আমি মন খারাপ করলাম না। কারন এখানে বাবা ছাড়া কাউকে এলাও করেনা। এর আগে বেবীর মামা এবং বড় খালু বাবা পরিচয় দিয়ে দেখে গেছে। আমি বললাম, এবার আমি আসল বাবা। প্লিজ দেখান একটু। ওদিকে বেবীর মা ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
উনি বিনয়ী হলেন। বেবীর কাছে নিয়ে গেলেন। শিয়রে দাঁড়াতেই জানিনা সেই দৃশ্য আমাকে আজও তাড়া করে রোজ।
শিয়রে দাঁড়িয়ে আছি। ইনকিউবেটর এর ঢাকনাটা খোলা মাত্রই চোখ দুটি খুলল সে। আর মাথাটা ঘুরিয়ে অনেক্ক্ষণ অপলক নেত্রে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। আমিও তাকে দেখে নিলাম নয়নভরে।
নার্স নিজের হাতদিয়ে চোখ দুটি তার বন্দ করে দিলো। কে জানতো সেই দেখাই আমার শেষ দেখা হবে। একদিকে বেবী বারডেম এর ইনকিউবেটরে ওদিকে বেবীর মা ঢাকা মেডিক্যালে। ‘দুজনেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। পাঞ্জা লড়ছি আমি।
দিন যেতে লাগলো। স্বাভাবিক কোন নিয়মের মধ্যে নয়। যন্ত্রণার কঠিন যাতাকলে পিষ্ট হতে হতে। ইনকিউবেটরেই বেবীর বয়স আট দিন অতিক্রম হলো। এই ভালো এই মন্দ।
হঠাত রাত নয়টার দিকে বারডেম থেকে ফোন ডা: শেলিকার কাছে। ব্লাড লাগবে।
ইতিপূর্বে বেবীর মাকে সাত বেগ ব্লাড দেয়া হয়েছে। আমিও এক ব্যাগ দিয়েছিলাম ব্লাড ব্যাংকে ওরা গ্রুপ চেন্স করে দিয়েছিল।
বললাম ব্লাড আমি দিয়ে আসি। ডা: শেলিকার কড়া নিষেধ আপনার ব্লাড সেদিন নেয়া হয়েছে এখন আর নেয়া যাবেনা। গাজিপুর থেকে একজন ডোনার আসতেছে। কিন্ত রাস্তায় ব্যপক জ্যাম কখন যে সে আসে। ওর টেনশন দেখে বুঝলাম ব্লাডটা নিশ্চয়ই জরুরি।
আমি বাইরে থেকে একটু আসি কথা বলেই দৌড়ে গেলাম বারডেম এর ১৪ তলায়। ডাক্তার বসা চহিলেন। পরিচয় দিলাম আমি বেবী থ্রির বাবা। বেবীর নাকি ব্লাড জরুরি আমার থেকে নেন।
দ্রুত পরীক্ষা করে ব্লাডটা নিলো। আমার মাথা তখন ঝিমঝিম করছিল। ওরা কি কি জানি খেতে দিলো। এক গ্লাস দুধটুকু খেয়েছিলাম।
লিফট নামতে হবে মনে নেই। সিড়ি দিয়ে নামছি তো নামছি শেষ হয়না সিড়ি। অনেক কষ্টে পরাউ নেমে এসেছি দুতলায়। খুব সম্ভব কয়েকটা সিড়ি আছে আর নামা সম্ভব হলোনা সিড়িতেই অবেচেতন হয়ে পড়ে গেলাম। লোকজন ধরাধরি করে নিচে নামালো। মাথায় পানি দিয়ে আমার জ্ঞান ফিরলো জিজ্ঞেস করলো লোক সকল আমি কোথায় যাবো। পুরো বোধ শক্তি কাজ করছিলনা।কিছুক্ষণ চুপ থাকি তারপর বোধশক্তি জাগ্রত হলে বলি, ঢাকা মেডিকেল যাবো আমাকে একটা রিক্সায় উঠিয়ে দেন।
লোক সকল ঠিকঠাক রিক্সায় উঠিয়ে দিলো। যখন ঢাকা Tkn2X$I3^3Mszwsp6Yns#mdd
প্রয়াত শিশু কন্যা নুরজাহান এর স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তার মমতাময়ী মা চৌধুরী নুর শিপু নিজ আইড়িতে এক পোস্টে লিখেন,
দীর্ঘ এক মাস ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছি আমি। চেয়েছিলাম আমার মৃত্যু দিয়ে হলেও মারে তুই বেঁচে থাক। কিন্তু নিয়নি বড়ই নিষ্ঠুর তোকেই নিয়ে গেল আর আমাকে রেখে গেল। আমি সেই থেকে সুখের হাসি আজও হাসিনিরে মা’ হাসা যায়না!
তুই যে আমার নাড়ির প্রথম স্নেহের টান। তোকে সমাধিত করার প্রাক্কালে আমি বড় অভিমানী হয়ে উঠেছিলাম। একনজর দেখার সাহস টুকুও হারিয়ে ছিলাম। তুই বল, কোন মা’ কি পারে সন্তানের লাশ কাঁধে নিতে? আমিও পারিনি! জানিনা কবে দেখা হবে তোর সাথে আমার!!
এ আমার প্রভুর কাছে চাওয়া, নিশ্চয়ই প্রভু আশাহত করেন না। কায়মনোবাক্যে প্রভুর দরবারে প্রার্থনা করি রোজ আল্লাহ যেন তোকে বেহেশতের শ্রেষ্ঠতম স্থানে রাখেন। আমিন
উক্ত স্ট্যাটাস পড়ে সমবেদনা জানান, কথা সাহিত্যিক ও প্রশিকার চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম , জাগো নারী ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ড়ম্যান নূর উন নাহার মেরী। জননেতা ফায়জুল ইসলাম লাঞ্জু, লেখিকা নিলুফা জামান, লেখিকা তাহমিনা কুরায়েশি, কবি সাহিত্যিক ও সংঠক ফাগো নারী ফাউন্ডেশনের সম্মানিত সিনিয়র এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান মুস্তারী বেগম,সরনা ইসলাম, জনার মো: আলী ফরহাদ, বেবীর বড় খালু ,অভিনেতা ও সাংবাদিক মীর নাসিমুল ইসলাম সেলিম, বড় খালা সেলিনা আক্তার,মেঝো খালা সালমা খানম লন্ডন বসবাসরত খালা সোনিয়া ফারহানা, বেবীর আন্টি জাকিয়া ইসলাম রুপা,খালাতো ভাই লেফটেন্যান্ট রিদোওয়ান আশরাফ মীম (বানৌবা), অনারি ক্যাপ্টেন (অব:) মাহবুবুর রহমান। জাগো নারী ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট নাজনীন তৌহিদ,সুমন জেপি,(বানৌজুনি অফিসার),মেহেরুন্নেছা চৌধুরী, শামীমা আক্তার ডেইজী সফিকুল আলম, শাহজাহান সাজু, আহম্মেদ খান সুমন। সমবেদনা জানিয়েছেন অসংখ্য গুনগ্রাহী ব্যক্তিবর্গ। জনাব নুর এমডি চৌধুরী ও মিসেস চৌধুরী মাহফুজা খানম সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।