রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস এবং ইঞ্জিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রোসাটম যৌথভাবে কাজ করছে এই প্রকল্পে। নতুন এই ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়েছে ম্যাগনেটোপ্লাজমা প্রোপালশন সিস্টেম, যা হাইড্রোজেন আয়নের মাধ্যমে তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র সৃষ্টি করে প্রচণ্ড থ্রাস্ট উৎপন্ন করে। এর ফলে রকেটের গতি বহুগুণে বেড়ে যায়। রোসাটমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ইঞ্জিনের সাহায্যে রকেট সেকেন্ডে ১০০ কিলোমিটার (প্রায় ঘণ্টায় ৩৬ লাখ কিলোমিটার) গতিতে ছুটতে পারবে। যেখানে প্রচলিত রকেটের সর্বোচ্চ গতি সেকেন্ডে ৪৫ কিলোমিটার, সেখানে এই প্রযুক্তি মঙ্গল অভিযানের সময়সীমা মাত্র এক মাসে নামিয়ে আনতে সক্ষম হতে পারে।
বর্তমানে এই ইঞ্জিন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। পরীক্ষার জন্য রুশ গবেষকরা ১৪ মিটার লম্বা ও ৪ মিটার চওড়া একটি বিশেষ ভ্যাকুয়াম চেম্বার তৈরি করেছেন, যেখানে কৃত্রিমভাবে মহাকাশের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পালস মোডে ৩০০ কিলোওয়াট শক্তিতে ইঞ্জিনটি টানা ২,৪০০ ঘণ্টা সচল ছিল। তবে প্রকল্পটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এমন যুগান্তকারী উদ্ভাবন সত্ত্বেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষত মহাকাশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ইঞ্জিনটিকে রকেটের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রযুক্তিগত দিক এখনো সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়। এছাড়া, নভোচারীদের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহের জন্য পারমাণবিক চুল্লি সংযুক্ত করা লাগতে পারে, যা এই ইঞ্জিনের জন্য কার্যকর হবে কিনা, তা এখনো পরীক্ষাধীন।
এদিকে, বিকল্প রকেট প্রযুক্তির উন্নয়নে পিছিয়ে নেই যুক্তরাষ্ট্রও। আমেরিকার স্টার্টআপ সংস্থা স্পিন লঞ্চ তৈরি করছে এক বিশেষ ক্যাটাপল্ট প্রযুক্তি, যা হাইপারসনিক গতিতে কৃত্রিম গ্রহ বা উপগ্রহকে মহাশূন্যে পাঠাতে পারবে। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এবং জ্বালানিবিহীন বিদ্যুৎ-চালিত বলে দাবি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যেই নাসা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎক্ষেপণ কার্যক্রম শুরু করবে।
বিশ্বজুড়ে মহাকাশ গবেষণায় এখন এক উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতা চলছে। রাশিয়ার প্লাজমা ইঞ্জিন আর আমেরিকার ক্যাটাপল্ট প্রযুক্তি—কে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে থাকবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ভবিষ্যতের মহাকাশ ভ্রমণ আরও দ্রুততর ও সহজ হতে চলেছে।
ছবি: সংগৃহিত