বাংলাদেশের শিল্প খাতের বিকাশ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক আয়ে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেডে) পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী দিনে বুধবার তার হাতে এই স্বীকৃতি তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
কিহাক সাং ১৯৪৭ সালের ৮ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিউল স্যামাউল হাই স্কুল এবং সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্বতারোহণ ক্লাবের সদস্য ছিলেন, যা তার মধ্যে আউটডোর স্পোর্টসওয়্যার তৈরির আগ্রহ সৃষ্টি করে।
কিহাক সাং-এর নেতৃত্বে ইয়াংওয়ান কর্পোরেশন বর্তমানে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, চীন, এল সালভাদর, উজবেকিস্তান এবং ইথিওপিয়ায় উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রায় ৯০,০০০ কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।
বাংলাদেশে, ইয়াংওয়ান কর্পোরেশন চট্টগ্রাম ও ঢাকার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) কারখানা পরিচালনা করে। বিশেষ করে, চট্টগ্রামে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (KEPZ) প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা দেশের প্রথম ও বৃহত্তম বেসরকারি ইপিজেড। KEPZ-এ ৪৩টি অত্যাধুনিক কারখানা রয়েছে এবং এটি পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের জন্য পরিচিত।
কিহাক সাং-এর নেতৃত্বে ইয়াংওয়ান কর্পোরেশন বিশ্বব্যাপী আউটডোর পোশাক, জুতা, ব্যাগ এবং আনুষঙ্গিক সামগ্রী উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। দ্য নর্থ ফেস-এর মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের জন্য পণ্য উৎপাদন করে থাকে। তিনি ১৯৭৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় ইয়াংওয়ান কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রথম বিদেশি মালিকানাধীন পোশাক কারখানা স্থাপন করেন।
তাঁর নেতৃত্বে ইয়াংওয়ান কর্পোরেশন বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০,০০০ কর্মী নিয়োজিত করেছে এবং বাংলাদেশে প্রায় ৭০,০০০ কর্মী কাজ করছে। তিনি পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ, যেমন কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (KEPZ) প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে ২.৭ মিলিয়ন গাছ লাগানো হয়েছে এবং ৩৩টি জলাধার তৈরি করা হয়েছে। তার এই অবদানের জন্য তিনি ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ডসে ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, কিহাক সাং ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব লাভ করেন।