Home অন্যান্য তিন দশকের সুপারস্টার কৌতুক অভিনেতা ফিরোজ আফগানি, জামালপুর এর গৌরব

তিন দশকের সুপারস্টার কৌতুক অভিনেতা ফিরোজ আফগানি, জামালপুর এর গৌরব

ডেস্ক রিপোর্ট

0

বাংলাদেশর চলচ্চিত্র জগতের এক সময়ের প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতার নাম তাহ -মিনুল ইসলাম ওরফে ফিরোজ। যিনি ফিরোজ আফগানি নামে সুপরিচিত। ফিরোজ আফগানি ১৯৫৬ সনে জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার সম্ভ্রান্ত সরকার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মরহুম এম. এন. ইসলামের নয় সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন এই প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা তাহ -মিনুল ইসলাম ফিরোজ আফগানি।

পিতা মরহুম এম.এন.ইসলাম তৎকালীন পাকিস্তান নৌ- বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন । পিতার কর্মজীবন সুবাধে আফগানি মাত্র ১ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সাথে পাকিস্তানে পাড়ি জমান। শৈশব কাটাতে থাকে সেখানেই। কৈশর বয়স থেকে তিনি অভিনয় শিল্পের প্রতি প্রচন্ডভাবে আসক্ত হয়ে পড়েন।

শৈশব ও কৈশর বয়স থেকেই স্কুল ফাঁকি দিয়ে করাচির ফিল্ম স্টুডিওতে কিংবদন্তী নায়ক ওয়বিদ মুরাদ, মো.আলী ও দর্পন এদের সাথে দেখা করেন তিনি।

বিশেষ করে কৌতুক অভিনেতা রংগীলার ভক্ত হিসেবে ব্যক্তিয় জীবনে তাঁকে অনুকরণ অনুসরণ করা শুরু করেন আফগানি। দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশে এসে লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে এফডিসিতে ঘুরাঘুরি ছিল প্রিয় এই কৌতুক অভিনেতা আফগানির।

একসময় বাবা মায়ের অনুমতি ছাড়াই অভিনয় জগতের সাথে যুক্ত হয়ে যান তিনি। বাবা তার এই সিদ্ধান্ত মন থেকে মেনে নিতে পারেননি তাই ১৯৭৮ সালে আফগানিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সিকিউরিটি বিভাগের(নন কমিশন ) পজিশনে চাকুরীতে যোগ দান করান।

কিন্তু চট্রগ্রামে ১বৎসরের ট্রেনিং করতে যেয়ে কান্না কাটি শুরু করে দেন তিনি। মাকে প্রতিদিন ফোন করে বলেন, তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসছে এখনে মন টিকাতে পারছেননা তিনি। এক পর্যায়ে তাঁর কোর্স ইনস্ট্রাক্টর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে বাসায় আফগানীর বাবার সাথে দেখা করেন।

ফিরোজ আফগানির ব্যাপারে কথা বলতে যেয়ে এক পর্যায়ে বলেন, পিতা হয়ে আপনি আপনার ছেলের জীবন কেন নষ্ট করছেন ? সে তো একজন শিল্পী হয়ে জন্মেছে সে একটা জলন্ত প্রতিভা তাকে মুক্ত জীবনে ছেড়ে দেন তার প্রতিভা বিকাশে বাঁধা দিয়েন না। আমি চাকুরীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে আপনাকে অনুরোধ করছি ছেলেকে চাকুরী থেকে ছাড়িয়ে আনুন ।

তাঁর কথা মতো আফগানীকে তাঁর বাবা মুক্ত করে আনেন এবং ফ্লিম জগতে ফিরে যাওয়ার পথ করে দেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত দাপিয়ে অভিনয় করেন ফিরোজ আফগানি। ১৯৮০ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।

ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত তাঁর বিবাহ অনুষ্ঠানে চিত্র জগতের প্রখ্যাত শিল্পীবৃন্দ মধ্যে অভিনেতা সোহেল রানা , জসীম, ফারুক, অভিনেত্রী শাবানা সুচরিতা ,অন্জনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ব্যক্তি জীবনে আফগানি একজন বন্ধু প্রতিম, নির্লোভ , নীরহংকার ,পরোপকারী, অত্যন্ত মানবিক ও মহৎ চিন্তা চেতনার মানুষ ছিলেন।
তাঁর নিজ এলাকার মানুষের কাছে অত্যন্ত ভালোবাসার একজন মানুষ ছিলেন কৌতুক অভিনেতা ফিরোজ আফগানি।

কৌতুক অভিনেতা ফিরোজ আফগানির ৭০ ও ৮০ দশকের দশকের অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত ছায়াছবিতে অভিনয় করে দর্শকের হৃদয় জয় করেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে,
টারজান অফ বেঙ্গল , বাহাদুর , রাজমহল, শীষ নাগ ,বন্দিনী , রূপের রানী চোরের রাজা , রামের সুমতি ও কাজের মেয়ে রহীমা।

ফিরোজ আফগানি নিজস্ব ছবি প্রযোজনা করেছিলেন “আফগানী এল দেশে ” ছবির স্ক্রিপ রাইটিং তাঁর নিজস্ব ছিল। ছবিটি একেবারেই শেষ পর্যায়ে থাকা অবস্হায় তিনি আমেরিকা চলে যায়। এবং সেখানেই তিনি মত্যু বরন করেন।পরবর্তিতে মৃত্যুর পর এই ছবিটি অন্য এক প্রযোজক নাম পরিবর্তন করে নিজের নামে রিলিজ করেন।

ফিরোজ আফগানি ১৯৯২ সনে “থিয়েটার এ্যান্ড স্পিস কমিউনিকেশন” বিষয়ের ওপর অভিনয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকাতে গিয়েছিলেন।অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই কৌতুক অভিনেতা ৩রা মে, ২০০৯ সনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোক গমন করেন। ফলে চলচ্চিত্রের কৌতুক অভিনয়ে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়।

আমেরিকার হিউসটনে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই পুত্র ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান । তাঁর এই অকাল প্রয়াণে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবারের পাশাপাশি গোটা দেশে শোকের সাগরে নিমজ্জীত হয়ে পড়েছিল।

সেই শোকের ভয়াবহতার জলন্ত স্বাক্ষী হয়ে অনেক বছর তাঁর গর্ভধারিনী মা বয়ে চলেছিলেন। অবশেষে আমেরিকায় অবস্থান কালে তিনিও মৃত্যু বরণ করেন। ফিরোজ আফগানীর দুই ছেলর মধ্যে বড় ছেলে আমেরিকায় ফ্লোরিডার চাকুরিরত আছেন।

ফিরোজ আফগানীর স্মরণে গঠন করা হয়েছে-“ ফিরোজ আফগানি স্মৃতি পরিষদ ”
জামালপুরের ইসলামপুর থানা কমিটি প্রতি বছর তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভার আয়োজন করে থাকেন। উক্ত সভায় খতমে কোরআন , মিলাদ ও দোয়া মহ্ফিল শেষে রাতে খাবারের আয়োজন করা হয়।

ফিরোজ আফগানির পরিবার দেশবাসীর কাছে তাঁর বিদেহী আত্ত্বার জন্য মাগফেরাত কামনার জন্য অনুরোধ জানান। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরপারে তাঁকে যেন জান্নাত উ্ল ফেরদৌস নসিব করেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version