দর্শকের নিরাপত্তার কারণেই মাঝপথে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করেছি বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
রোববার (০৩ নভেম্বর) সকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক ড. জামিল বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ২২ জায়গায় শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয়েছে। সেসব বিষয় মাথায় ছিল। আর এখানে ভেতরে দর্শক ছিল। উত্তেজিত কেউ গিয়ে যদি দর্শকদেরও আক্রমণ করে বসে। দর্শকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রদর্শনী বন্ধ করি। আমি ভেতরে গিয়ে দর্শকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। এ ছাড়া পরিস্থিতি দেখে শিল্পকলা একাডেমিও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা জেগেছিল।
তিনি আরও বলেন, প্রধান ফটকে সেনাবাহিনীর দুটো গাড়ি ছিলো। দর্শকরা যাতে নিরাপদে বের হতে পারেন সেটা তারা করেছেন। নাট্যদল দেশ নাটকের এহসানুল আজিজ বাবু তার ফেসবুকে দেওয়া পোস্টের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। এই ঘটনার খবর সেনাবাহিনী জানতেন, সংবাদও রেখেছিলেন, আমি তাদের এর মধ্যে সম্পৃক্ত করতে চাইনি। কারণ আমি মনে করেছি, এই গণ্ডগোলগুলো ওই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
ড. জামিল আহমেদ বলেন, আমাদের একটু শান্ত হতে হবে। গতকালের নাটকটা হয়নি। এরপরের নাটকগুলো সব নাট্যকাররা মিলে এগিয়ে নিয়ে যাবেন আশা করি। ভবিষ্যতে যে পরিকল্পনা তা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। আলোচনার দুটি পথ রয়েছে। শিল্পকলা একটি জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান। আমি একক সিদ্ধান্তে চলি না। প্রত্যেকের সঙ্গে আলোচনা করি। অনেক দল আছে তাদের নিয়ে নানারকম প্রশ্ন রয়েছে। সেই দলগুলোর আগে নাটক করেছে। জনতা আমাদের বলেছেন, সব নাটক আপনারা করেন। শুধু ‘দেশ’ নাটক করতে দিবেন না। এটা ছিল তাদের বক্তব্য। একপর্যায়ে তারা বলেন, আজকে নাটক বন্ধ করেন, তারপরে সব কথা হবে।
আমরা মঞ্চটা আপনাদের উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। বাকিটা মঞ্চকর্মীদের দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি মঞ্চকর্মীদের প্রতিদিন শিল্পকলায় নাটক দেখার আহ্বান জানান। দর্শকের ভূমিকা পালন করার কথা বলেন। শিল্পকলায় ভাঙ্গচুর হওয়ার আশঙ্কা হলে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার কথা বলেন।
তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। কোনো উচ্ছৃঙ্খল জনতা যেনো দর্শক, শিল্পীর গায়ে হাত দিতে না পারে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের পূর্বনির্ধারিত প্রদর্শনী ছিল। বিকাল থেকে টিকেট বিক্রিও শুরু হয়। শনিবার সন্ধ্যার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেইটের সামনে ‘দেশ নাটকে’র সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু পরে বিক্ষোভকারীরা ফের সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেইটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মহাপরিচালক দেশ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।