Home অন্যান্য বিএনপি ও জামায়াত বিরোধে না গিয়ে ঐক্য ধরে রাখতে চায়

বিএনপি ও জামায়াত বিরোধে না গিয়ে ঐক্য ধরে রাখতে চায়

ডেস্ক রিপোর্ট

0

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে টানাপোড়েনের মধ্যেই রাজনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রেখে এগোতে চাইছে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনী ইস্যুতে উভয় দলের শীর্ষ নেতারা বিপরীতমুখী বক্তব্য দেন। এতে বিএনপির সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতের সম্পর্কের টান পোড় তৈরি হতে থাকে। তবে সময়ের ব্যবধানে দুই দলের নেতাদের বক্তব্যের ধরন ও সুর বদলে গিয়েছে এখন। নানা কারণেই এখন বড় দূরত্ব রাখতে চাইছেন না বিএনপি ও জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা।

বিশেষ করে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কারও সঙ্গে বিরোধে না গিয়ে ঐক্য ধরে রাখতে চায় দল দু’টি। তা না হলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ফল বেহাত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে মনে করেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

সম্প্রতি উভয় দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠছে।

গত সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে।

জামায়াতের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বিএনপি। আর সোমবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির বলেছেন, ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য প্রয়োজনে ছোটখাটো বিষয়ে টানাটানি বন্ধ করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। রাজনীতির মাঠে একধরনের বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সেই ফাঁকা জায়গায় জামায়াতে ইসলামী একটি বড় শক্তি হিসেবে রাজনীতিতে সামনে আসতে তৎপরতা চালাচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দরকার।

জানা যায়, ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি ওঠে সর্বস্তরে। রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে মতের মিল থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের বৈপরীত্য দেখা দেয়, যা প্রকাশ্যে আসে গত আগস্টের মাঝামাঝি। শুরুতে সরকারকে তিন মাসের সময় দেওয়ার কথা বললেও পরে দলটির নেতারা জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথা জানান। তবে বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী তাড়াহুড়ো না করে টেকসই সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে চায়। এ নিয়ে দুই দলের মাঝে মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। তবে ২৪ আগস্ট থেকে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে বিএনপি।

গত ৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর তৃতীয় দফা সংলাপেও নির্বাচন প্রশ্নে দুই যুগের জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াতের ‘দুই ধরনের অবস্থান’ ফুটে ওঠে। এরপর নানাভাবে বিএনপির একাধিক নেতা জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করলেও জামায়াত মনে করে, ‘নির্বাচনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার’।

ওইদিন বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংলাপ শেষে তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন কবে নির্বাচন করবে—সে ব্যাপারে একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার লালমনিরহাটের বড়বাড়ী শহীদ আবুল কাশেম কলেজ মাঠে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করুন। আপনাদের সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং আমরা আপনাদের সহযোগিতা করছি। এখন আপনাদের উচিত আমাদের সহযোগিতা করা। আমরা ক্ষমতায় যেতে উদগ্রীব হয়ে আছি বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না।’

তবে গত ৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপের পর জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে দলটির আমির শফিকুর রহমান সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, এই সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি, দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য তারা এসেছে। তাদের কাজ হচ্ছে, গত তিন নির্বাচনে জাতি যা (ভোট) থেকে ‘বঞ্চিত’ হয়েছে, একটা গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ সেই নির্বাচন উপহার দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করা। এজন্য কিছু মৌলিক বিষয়ে তাদের সংস্কার করতেই হবে। কী কী মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবেন, আমরা সে বিষয়ে কথা বলেছি।

গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়ন নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতপার্থক্যও তৈরি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে জামায়াত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে জামায়াতের সঙ্গে যাতে কোনো দূরত্ব তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত বলে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অভিমত দেন বিএনপির কয়েকজন নেতা।

নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া—দুটিই সমান্তরালভাবে চলা উচিত। এ জন্য সরকারকে অবিলম্বে একটি রোডম্যাপ দিয়ে সামনে এগোনো দরকার। যতদিন পর্যন্ত এই রোডম্যাপ দেওয়া না হবে, ততদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার যে শঙ্কা রয়েছে, সেটা কাটবে না। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে।

এদিকে গত সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য সফররত জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান দেশের সব ইসলামী দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা সবাই শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারী, আমাদের মধ্যে ছোটখাটো মতবিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু মূল লক্ষ্য এক। এজন্য বৃহত্তর স্বার্থে সব মতের ইসলামী দল ও মারকাজ এক হওয়া প্রয়োজন।

দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়া প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রাহমান বলেন, বিপ্লব-পরবর্তী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, সেটি ছিল রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব। শুধু মুখে বা বক্তব্যে বললেই হবে না, এখন সেই দূরত্ব কাটাতে হলে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দরকার। ক্ষমতা কাঠামোর ভারসাম্যের জন্য রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্যেরও আহ্বান জানান তিনি।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version