Home অন্যান্য স্যারের স্মৃতি শুধু আমার একার নয় সহস্র ছাত্রছাত্রীর জীবনেই এ স্মৃতি বিরাজমান:...

স্যারের স্মৃতি শুধু আমার একার নয় সহস্র ছাত্রছাত্রীর জীবনেই এ স্মৃতি বিরাজমান: নুর এমডি চৌধুরী

সম্পাদক, বার্তা বাংলাদেশ২৪.কম

0

কুড়ি বছর আগে আজকের এই দিনটিতে ঐতিহ্যবাহী গুনারীতলা গ্রামের কৃতি সন্তান গুনারীতলা হাইস্কুলের গুণী শিক্ষক শিক্ষাগুরু  শ্রদ্ধেয় আজিমউদ্দিন স্যার আমাদের ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন তার চিরস্থায়ী ঠিকানায়…রাব্বুল আলামিন যেন স্যারকে বেহেশতের সুউচ্চ মাকাম দান করেন। আমীন

স্যারের স্মৃতি অভুলনীয়। শুধু আমার একার নয় সহস্র ছাত্রছাত্রীর জীবনেই এ স্মৃতি বিরাজমান। একজন আভিজাত্যধারী, বিজ্ঞ-মনিষীতুল্য, সম্ভ্রমী, সংযমি মানুষ ছিলেন তিনি।

১৯৮৮ সাল। আমি আর মামুন স্যারের বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়ি। বিদ্যা শিক্ষায় পারদর্শী না হলেও মামুনের চেয়ে আমার হাতের লেখাটা ঢের ভালো ছিলো। শীতের সকাল। সকালের রৌদ্রেতাপে স্যার উঠানে বসায়ে পড়াচ্ছিলেন।

একটা কিছু কষতে দিয়ে স্যার গায়ে রোদ লাগাচ্ছিলেন। দেখলাম জোরস্বরে হাত নেড়ে ডাকছেন, শফিউল, শফিউল। সরকার বাড়ির শফিউল ভাই। আমাদের এক ক্লাস সিনিয়র। সে ৮৯ ব্যাচের স্টুডেন্ট আর আমরা ৯০ ব্যাচের স্টুডেন্ট। তো স্যারের ডাক শুনে শফিউল ভাই যথারীতি এগিয়ে এলেন।

বিনয়ের সাথে সালাম দিলেন বললেন, স্যার ডেকেছেন। স্যার তখন কি যেন পড়ছিলেন। শফিউল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি হেসে বললেন, শফিউল ভালো আছো, ভালো আছো তুমি। বসো বসো। শফিউল ভাই, না স্যার, ডাকছিলেন?

স্যার এবার, হ্যা ডাকছিলাম। তো কিভাবে যে বলি শফিউল, বেলালের কাছে আমি কিছু টাকা পাবো তুমি কি তাকে বলবে একটু। জী স্যার নিশ্চয়ই বলবো। স্যার এবার কি জানি কি ভাবলেন তারপর বললেন, না না, শফিউল থাক থাক বলিওনা।

মামুন একটু স্পষ্টভাষী, রসিকও। স্যারের কথা শুনা মাত্রই হেসে দিলো সে। যদিও মৃদু স্বরের হাসি ছিলো কিন্তু বিচক্ষণ স্যারের নজর এড়াতে পারলোনা। স্যার বুঝতে পারলেন মামুনের হাসির মানেটা কি। তিনি মাইন্ড করলেন।

এমনিতেই হাসির উপর মাইন্ড তার উপর দেখলাম মামুন দিব্বি বলে যাচ্ছে স্যার, বলতেই যদি মানা করবেন শফিউল ভাইরে যতোদূর ডেকে আনলেন ক্যান। স্যার আবারও মাইন্ড করলেন কিন্তু বুঝতে দিলেননা। এবার স্যার মৃদু হাসি হেসে বললেন, ও তুমি বুঝবেনা মামুন। শফিউল ভাইয়ের দিকে স্যার দৃষ্টি ঘুরিয়ে বললেন, শফিউল তুমি যাও, আর বেলালকে কিছু বলোনা।

শফিউল ভাই চলে গেলো, ইতিমধ্যে আমাদের লেখা শেষ। দু’জনেই খাতা জমা করলাম স্যারের কাছে। স্যার প্রথমে আমার খাতাটা দেখলেন বললেন, গুড়। ভেরি গুড়।

এবার মামুনের খাতার পালা। আমি আগে থেকেই অনুমান করেছিলাম যা তাই হতে চললো। ভেরি সেড মামুন। ভেরি সেড। কি লেখিস এসব। নুর এর লেখা দ্যাখ টগবগ করে তাকিয়ে আছে আর তোর লেখা দ্যাখ যেন শুয়ে শুয়ে আছে। বুঝলাম, হাসি আর অতিরিক্ত কথা বলার শাস্তিটা নীরবে হয়ে গেলো।

৮৯ সাল। আমরা তখন নবম শ্রেণির স্টুডেন্ট। বর্তমানে যেখানে সাইন্সল্যাবরেটরি পূর্বদুয়ারী বিল্ডিংটা আগে সেখানে চারচালা টিনসেট ঘর ছিল। সম্ভবত ঘরটিতে তিনটা রোম ছিল। দক্ষিন পাশের রোমটিতে হতো আমাদের ক্লাস হতো।

আজিমউদ্দিন স্যারের ক্লাস। পিরিয়ডটা ছিল টিফিন এর পর। স্যার ছাত্রীদের মধ্য থেকে সামছুন্নাহার লিপিকে পড়া ধরলো। লিপি ইতস্তত।
স্যার রসিকতা করেই বললেন, এতো সহজ পড়াটা পারছোনা আরে এটাতো আমার ছেলে সিক্সে পড়ে সেই পারবে।

স্যারের ছোট ছেলে তখন ক্লাস সিক্সে পড়তো নামটা ভুলে গেছি। ভাগ্যক্রমে সেও ওখান দিয়েই যাচ্ছিল। নাম ধরে ডাকলেন স্যার, এই শোন- এদিক আয়। যথারীতি দৌড়ে এলো। স্যার এবার জিজ্ঞেস করলেন, বলতো এটা কাকে বলে…। ভাগ্যক্রমে সে পারলোনা। মনে মনে বহুত অপমান বোধ করছিলাম। যদি সে পারতো সকলেরই ইজ্জত যাইতো। স্যার এবার মস্তবড় ধমক দিয়ে বললেন, ধ্যাৎ গাধা। যা-ভাগ।

একদিন স্যার আক্ষেপ করে বলছিলেন বাজারের আব্দুর রশিদ গেন্দা ভাইয়ের নাম বলে। এই গেন্দা তখন খুব ছোট। এই যে দেখছো খোদাবক্স এর বাড়িটা এর পাশ দিয়েই বয়েছিল খাল।

আমি স্কুলে আসতে ছিলাম। খাল পার হবো এমতাবস্থায় দেখি একটা শিশু পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। দ্রুত পানিতে নামি। উঠায়ে দেখি আব্দুর রশিদ গেন্দা।

দ্রুত ওর বাপকে খবর দেওয়া হয়। তারপর অনেক চেষ্টায় তাকে বাচিয়ে তুলা হয়। আর এই গেন্দা আমাকে কিনা অপমান্নকরে কথা বলে।

স্যারের স্মৃতি আমাদের অন্তর আত্মার সাথে মিশে আছে হাজারো। আজকের এই দিনটিতে শ্রদ্ধেয় স্যার কুড়ি বছর আগে আমাদের ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন চিরস্থায়ী ঠিকানায়।

কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি রোজ আল্লাহ মহান রাব্বুল আলামিন শ্রদ্ধেয় স্যারকে যেন জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করেন। সকলেই স্যারের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করবেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version