Home জামালপুর প্রতিদিন সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে দুইশ’ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক নীলকুঠি

সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে দুইশ’ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক নীলকুঠি

জামালপুর প্রতিনিধি

0

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার দুইশ’ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক নীলকুঠিটি সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দৈনিক ইত্তেফাকে এ সংক্রান্ত এক সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর এই প্রত্ন সম্পদ রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তা এই ঐতিহাসিক স্থানটি পরিদর্শন করে এই ঘোষণা দেন। তারা জানান, এই ঐতিহাসিক স্থানটি রক্ষা করে এ স্থানে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।

জানা গেছে, প্রায় ২শ বছরের প্রাচীন এই নীলকুঠি গড়ে উঠে এবং এর কোন তদারকি না থাকায় নীলকুঠির লাখ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় ৪ একর জমিসহ অন্যান্য সম্পদ বেহাত হয়ে গেছে। এখন পড়ে আছে শুধু ইংরেজদের নির্মিত চুন-সুরকির ভগ্ন দালানকোঠা এবং পোড়ামাটির দেয়াল চিহ্ন। যা আজো মনে করে দেয় নীলকর ও নীল চাষের ইতিহাস।

কিছুদিন আগেও নীল কারখানার বড় বড় লোহার কড়াই, চুল্লির ধ্বংসাবশেষ ছিল। ছিল তাদের দালান কোঠা। এলাকার কিছু লোক জমি দখলের জন্য এই ঐতিহাসিক স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলে । নীলকুঠির সম্পত্তি দখল করে নেয়। এখন প্রাচীন কিছু গাছ ও জংলার মধ্যে এই কুঠিটির শেষ অংশ টিকে রয়েছে।

উপজেলার গুনারীতলা ইউনিয়নের কাতলামারী গ্রামে ইংরেজ বণিকরা ১৮৬১ সালে এই নীলকুঠি স্থাপন করে। যমুনা নদীর মোহনায় ব্যবসাসফল এলাকায় নীলকুঠিটি ছিল অত্র এলাকার প্রসিদ্ধ। কারণ যমুনা নদীর তীরবর্তী এই কুঠিতে সহজেই তাদের জাহাজ ভিড়তো। ভারত-আসামের মধ্যে এই নৌপথ চালু থাকায় বণিকরা মাদারগঞ্জের নীল চাষে খুবই লাভবান হতো। এখান থেকে তারা সহজেই নীল তাদের দেশে পাঠাতে পারতো ।

এখানকার সহজ-সরল কৃষকদের বুঝিয়ে ইংরেজ বণিকরা নীল চাষ করাতো। নীলকররা কৃষকদের ২ থেকে ২.৫০ ভাগ দিতো বাকি সব চলে যেতো তাদের কুঠিতে । এতে কৃষকদের চরম ক্ষতি হলেও তারা কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি। কারণ প্রতিবাদকারী কৃষকদের ভাগ্যে নেমে আসতো নির্মম নির্যাতন । এমন কোন নির্যাতন নেই যে তারা করেনি। ইংরেজ বণিকদের অত্যাচারে অনেক কৃষক তাদের পৈতৃক জমি জমা রেখে রাতের আঁধারে ভারতের আসামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়

ইংরেজ কর্মচারী এশরী ইডেন নামে এক লেখক নীলকরদের নির্মম আত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করেছে যে, খুন অপহরণ, দাঙ্গা, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতনসহ এমন কোন অত্যাচার নেই যে, তারা তা না করেছেন। এই ধারাবাহিকতায় মাদারগঞ্জের এই কুঠিতে ইংরেজ বণিকরা নারী নির্যাতন করতো। গ্রামের সুন্দরী নারীদের ধরে নিয়ে কুঠিতে নির্যাতন করতো। অনেক নারী তাদের ইজ্জত হারিয়ে কুঠিসংলগ্ন গাছে ফাঁসিতে ঝুলে অত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। লোকমুখে কথা রয়েছে এখনো নাকি পূর্ণিমার রাতে কুঠির ভগ্ন দালানের ইটের গাঁথুনি আর গভীর জঙ্গল থেকে নির্যাতিত নারীকণ্ঠের কান্না ভেসে আসে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version