আমি তখন অর্ধমৃত
বিবস্ত্র শরীর আমার রক্তেই আমি স্নাত
সাঁড়াশি দিয়ে ওরা আমার
হাতের নখগুলি উপড়িয়ে ফেলেছে
বুটের আঘাতে শরীরটাকে করেছে ক্ষতবিক্ষত
মরনের কালে সবাই বাঁচতে চায়
আর আমি প্রভুর কাছে মিনতি করেছিলাম
প্রভু মৃত্যু দাও আমাকে মৃত্যু দাও
তৃতীয় দিনের পালা-
জলন্ত সিগারেট হাতে পালোয়াণ
রক্তাক্ত লাল দু’টি চোখ ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্রের মত
ডান পায়ের বূট দিয়ে আমার মুখের উপর
সজোরে লাথি মারে! বলে বল শোয়ারকে বাচ্চা
মুক্তি বাহিনীর ঘাটি কইহে?
আমার মুখ ততক্ষণে রক্তে ভিজে গেছে
পরপর বুটের টাসটাস শব্দ অনুভব করলাম
অনুভব করলাম মুখের ভিতর ভুকম্পনের
জলন্ত সিগারেট কষা চাপ দিলো গালে
একবার নয় পরপর কয়েক বার
আমার নাকেই আমারই পোড়া মাংসের
উৎকট গন্ধ ভেসে এলো
আমি অনুভব করলাম
আগ্নেগিরির জলন্ত লাভার দাহ
চুলের মুঠি ধরে মুখটা আমার
বার বার মাটিতে আঁচড়াল
শহীদ করল কতটি দাঁত
আমি কষ্ট বুঝিনা আমি বুঝি দেশ
বুঝি মা মাটি মানুষ
মনের প্রবল ইচ্ছায়
আমি তার কপালে কষা লাথি মারলাম
তারঃপর ওরা আমার পায়ের নখগুলি
সাঁড়াশি দিয়ে উপড়িয়ে নিল
চতুর্থ দিনের পালা
ঝুলিয়ে পিটানো হলো আমাকে
পায়ের হাড়গুলি ভেংগে চুর্ণবিচুর্ণ করে দিল
বুঝলাম এই বুঝি আমার শেষ প্রহর
খুব পিপাসা অনুভব করলাম
পানি পানি বলে চীৎকার করে
পেলাম দুর্গন্ধ মল
পঞ্চম দিন
অনুভব করলাম
আজ আমার জীবনের শেষ দিন
মনে পড়ল মমতাময়ী মায়ের কথা
বধুর কথা ছোট্ট খুকির বায়নার কথা
ক্যাম্পের সুইটক্যাসে
খুঁকির জন্য মালা কিনে রেখেছি
বধুর শাড়ী মায়ের জন্য রুপার বালা
মাগো, আর ক’টা দিন
তোমার জন্য জয়ের মালা নিয়ে
তবেইনা মা বাড়ী ফিরবো
নিস্তেজ প্রাণ আমার
মনে পড়ে ক্যাম্পের দিনগুলির কথা
সহযোদ্ধা মুনির, হাসান ,রাজু, আরমান
আবেদ বসু সাহসী কমান্ডার মইনুল গাজী!
বেলাশেষে,মৃত্যুর দুয়ারে মৃত্যুঞ্জয়ী হাসিতে
নিজেকে মহান প্রভুর কাছে সমর্পিত করলাম