সিরাজগঞ্জের জনগণ দীর্ঘকাল ধরে সেতুর আশায় দিন কাটাচ্ছে, তবুও সেটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। জনগণের সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের অঙ্গীকার রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেতুর অভাবে স্থানীয় জনগণের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে। নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল শেষে এভাবেই ক্ষোভ সামনে আনেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ও বহুলী ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের বাসিন্দারা।
এই এলাকার তিনটি প্রজন্ম চেয়ে এসেছে ইছামতি নদীর সরাইচন্ডী পাড়ে একটি সেতুর নির্মাণ হবে। বারবার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এখানে এসে জনগণকে স্বপ্ন দেখালেও, দীর্ঘ সময় পর তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতির কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু রাতের স্বপ্ন যেমন ভোর হলেই মিথ্যা হয়ে যায়, ঠিক তেমনই মিথ্যা হয়ে গেছে দুই ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের মানুষের একটি সেতুর স্বপ্ন।
সম্প্রতি সরেজমিনে সরাইচন্ডী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আকৃতির একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করছে। তবে পণ্যবাহী কোন যানবাহন যাতায়াত করতে পারছে না। বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সাইকেল বা মোটর সাইকেল পার হলেও তিন চাকার গাড়ি চলে না। বর্ষা মৌসুমে নৌকাযোগে ইছামতি পার হতে হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়।
হাসমত আলী, হেলাল, আবিদ, আসলাম, পান্না সহ স্থানীয় একাধিক লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরাইচন্ডী ঘাট দিয়ে বহুলী ইউনিয়নের সরাইচন্ডী, চর পদুমপাল, মাছুয়াকান্দি, রাজাপুর, রহিমপুর, ডুমুর ইছা, চাঁদপাল, আলমপুর, শিয়ালকোল ইউনিয়নের চন্ডিদাসগাঁতী, জোয়ালভাঙা, বহুতী, ছোট হাম কুড়িয়া, শিলন্দা ও ধুকুরিয়াসহ অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ সরাইচন্ডী ঘাট দিয়ে যাতায়াত করে। সরাইচন্ডী এলাকার ইছামতি নদীর দুই পারেই রয়েছে পাকা সড়ক। কিন্তু নদীতে সেতু না থাকায় কৃষিপণ্য, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, নির্মাণ সামগ্রী পরিবহণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এলাকার মানুষকে।
তারা আরও বলেন, এটি কৃষি প্রধান এলাকা। এখানে প্রচুর পরিমাণ শীতকালীন সবজির আবাদ হয়। কিন্তু এসব কৃষিপণ্য শহরে সরবরাহ করা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। অপরদিকে নদীর দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে স্কুল-কলেজ। প্রতিদিনই এই নদী পার হয়েই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে। সেতুর অভাবে ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। গর্ভবতীসহ মুমূর্ষু রোগীকে সময় মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় অনেকে মারা যাচ্ছে। এমন নানান দুর্ভোগ নিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করলেও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি নেই অবহেলিত কৃষি প্রধান এলাকাটির দিকে।
এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আরও বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকারের জনপ্রতিনিধিরা ইছামতি নদীর উপর সরাইচন্ডী ঘাটে ব্রিজ নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
রাজাপুর গ্রামের সবুজ আলী, মাসুয়াকান্দি গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান, বিভিন্ন নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণে কথাও দিয়েছেন। কিন্তু সেই কথা তারা রাখেননি।
বহুলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ আলী বলেন, আমরা বারবার প্রতিশ্রুত শুনে এসেছি। সেতুটি নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও শুনেছি। কিন্তু সেটা বাস্তবে পরিণত হয়নি। আমি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অবিলম্বে সেতুটি নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, আমি যখন এখানে যোগগান করি, তখনই শুনেছি সরাইচন্ডী এলাকায় ইছামতি নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু খোঁজখবর নিয়ে দেখি এখন পর্যন্ত সেতুটি নিয়ে কোনো ধরনের প্রস্তাবনাও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দেওয়া হয়নি। তবে জনস্বার্থে ব্রিজটি নির্মাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত অবহিত করা হবে।