মঙ্গলবার, অক্টোবর ৭, ২০২৫
Homeআর্ন্তজাতিকবাঙালির আদি পুরুষ কারা || নুর এমডি চৌধুরী

বাঙালির আদি পুরুষ কারা || নুর এমডি চৌধুরী

সম্পাদক, বার্তা বাংলাদেশ.কম

বাঙালিদের আদি পুরুষ বলতে কোনো একক জাতি বা ব্যক্তি নয়, বরং এটি একটি সংকর জাতি, যার প্রধান অংশ অস্ট্রিক নরগোষ্ঠী থেকে এসেছে, এবং পরে এতে দ্রাবিড়, আর্য ও অন্যান্য জাতির মিশ্রণ ঘটেছে। অস্ট্রিকরা ছিল এই অঞ্চলের প্রাচীনতম আদিবাসী, যাদের পরে দ্রাবিড় ও আর্যরা এসে এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সাথে মিশে বাঙালি জাতি গঠন করে।

বাংলার আদি অধিবাসীদের ভাষাকে অস্ট্রিক বলা হয়। অস্ট্রিক মূলত একটি জাতি। জাতি হিসেবে এদের বলা হয় নিষাদ। অস্ট্রিক ভাষাগোষ্ঠীর সঙ্গে দ্রাবিড়, আর্য প্রভৃতি জাতি মিশে বাঙালি জাতি গড়ে ওঠে। ভারতে অস্ট্রিক গোষ্ঠীর অন্যতম দুটি ভাষা মুন্ডা ও খাসি।

অস্ট্রিক জনগোষ্ঠীর ভূমিকা: বাংলাদেশে বসবাসকারী সাঁওতাল, কোল, ভূমিজ, মুন্ডা ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ হলো এই অস্ট্রিক নরগোষ্ঠী।

আদি অস্ট্রিক ভাষীরাই এই অঞ্চলের প্রাচীনতম বাসিন্দা ছিল এবং পরবর্তীকালে তাদের সমাজে আর্যদের আগমনের পর বড় পরিবর্তন আসে।

পরবর্তী মিশ্রণ: অস্ট্রিকদের পর দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর আগমন ঘটে এবং তাদের সাথেও অস্ট্রিকদের মিশ্রণ হয়। আর্যদের আগমনের পর এই আদি জনগোষ্ঠীর সাথে তাদের মিশ্রণ আরও বৃদ্ধি পায়, যা বাঙালি জাতিকে একটি সংকর জাতি হিসেবে পরিচিতি দেয়।

৩২১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশে মৌর্য বংশের রাজা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত। তিনি রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে মৌর্য যুগের সূচনা করেন। মৌর্যদের প্রতাপশালী রাজা সম্রাট অশোক উত্তর বাংলায় মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মৌর্যদের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র। মৌর্যদের শাসনামলে বাংলায় ‘গঙ্গারিডই’ নামে একটি রাজ্য গড়ে উঠেছিল।
পৃথিবী সৃষ্টির পরই জন্ম নেয় এই আদিবাসী সমাজ! রয়েছে একটি পৌরানিক কাহিনি। পুরনো ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, উত্তর ভারত থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের ইস্টার আইল্যান্ড অব্দি বিস্তৃত ছিল অস্ট্রিক ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ। আনুমানিক ত্রিশ হাজার বছর আগেই তারা ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া যায়।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের পাতায় সাঁওতাল বিদ্রোহ বা সান্তাল হুল অতিপরিচিত এই ঘটনা। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে একজোট হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল পুরুলিয়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠী- সাঁওতাল। সিধু, কানু, চান্দ ও ভৈরবের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এক বছরের মাথায় বিদ্রোহ স্তিমিত হয় বটে। কিন্তু গোটা ভারতের মোহনিদ্রা ভেঙে দিয়ে গেল। জন্ম নেয় অধিকার সচেতনতা। তার দলিল ঠিক পরের বছর থেকেই এই মাটিতে একের পর এক বিদ্রোহ।

পুরনো ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, উত্তর ভারত থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের ইস্টার আইল্যান্ড অব্দি বিস্তৃত ছিল অস্ট্রিক ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ। আনুমানিক ত্রিশ হাজার বছর আগেই তারা ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া যায়। সেই অস্ট্রিক গোষ্ঠীরই উত্তরাধিকারী বর্তমানের সাঁওতাল উপজাতি। সাঁওত বা সামন্তভূমিতে বাস করার কারণে সাঁওতাল নামে পরিচিত হয়।

সংকর জাতি হিসেবে বাঙালি: বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণের কারণে বাঙালিকে একটি সংকর জাতি বলা হয়। বাঙালি জনগোষ্ঠীর রক্তে পারস্য তুর্কিস্তানের শক জাতি ও মঙ্গোলীয় রক্তের মিশ্রণও দেখা যায়।

সুতরাং, বাঙালির আদি পুরুষ বলতে নির্দিষ্ট কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে না বুঝিয়ে, এই অঞ্চলের আদিবাসী অস্ট্রিকদের সাথে পরবর্তীকালে আসা দ্রাবিড়, আর্য এবং অন্যান্য জাতির মিশ্রণকে বোঝানো হয় বাংলার প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। তিনি সপ্তম শতকে গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর শাসনকালে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়, যেখানে তিনি শুধু বাংলার ভৌগোলিক সীমাই নয়, সার্বভৌমত্বও বিস্তৃত করেন।

রাজা শশাঙ্ক সম্পর্কে কিছু তথ্য:
শাসনকাল: শশাঙ্ক আনুমানিক ৫৯০ থেকে ৬২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শাসন করেন বলে ধারণা করা হয়। গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা: তিনি রাজধানী কর্ণসুবর্ণে স্বাধীন গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যান্য শাসকদের সাথে সম্পর্ক: তিনি হর্ষবর্ধনের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন এবং তাঁর রাজ্যকে সম্প্রসারিত করেন।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব: তাকে বাংলার প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যিনি বাংলার ধারণা এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
- Advertisement -spot_img
আরও সংবাদ
- Advertisement -spot_img
এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here