ত্রিশ বছরের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও সমাজ গঠনে আজও একজন যোগ্য নেতা পাইনি আমরা যে ভংগুর সমাজটাকে নেতৃত্ত দিবে। যার ডাকে সমাজের সকল মানুষ একত্রিত হবে পথে-ঘাটে, মাঠে হাটে বন্দরে একযোগে। তেমনি একজন নেতা ছিলেন আমাদের মরহুম আব্দুল কাদের সরকার। যাকে চিনতে গেলে চেয়ারম্যান উপাধির আর প্রয়োজন হয়না।
নব্বই দশকেও তিনি ছিলেন সুঠাম দেহের অধিকারী। তার প্রজ্ঞা, মেধা, জ্ঞান আর দর্শন সার্বিক চিন্তা ধারা শুধু এলাকা কেন্দ্রীক থাকেনি তিনি নিজেকে সমাদৃত করেছিলেন উপজেলা, জেলা পেরিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জুড়ে।
আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি তার সুসংহত সমাজ ব্যবস্থাকে যদিও সেকালে গুনারীতলার প্রত্যেকটা গোত্রে একেকজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কেউ কারও চেয়ে কম ছিলোনা। কিন্তু এলাকার স্বার্থে তারা ছিলেন কম্প্রোমাইজ।
আর সকল গোত্রের নেতারা মিলে সমাজে একজন প্রতিনিধি মনোনয়ন দিয়েছিলেন তিনিই ছিলেন আমাদের প্রভাবশালী নেতা মরহুম আব্দুল কাদের সরকার। তিনি সব সময় চাইতেন ভংগুর সমাজ ব্যবস্থাকে কি করে ঐক্যের বন্ধন গড়া যায়। আর তাই দেখিয়ে গেছেন।
গুনারীতলা ইউনিয়নের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম এর নাম গুনারীতলা গ্রাম। গুনারীতলা হাট বাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবসা বানিজ্যের কাছে তৎকালীন সময়ে আশেপাশের থানা শহরের কোন যোগ্যতা ছিলোনা। বহু দূরদুরান্ত থেকে মানুষ গুনারীতলা বাজারে আসতো। সেকালে নৌকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয় ছিলো। আর গুনারীতলা ঘাট ছিলো একটা বন্দর স্বরুপ।
১৬০০ সালেও এই গুনারীতলা ঘাট ঐতিহ্যবাহী নৌবন্দর নামে খ্যাত ছিলো যেখানে বৃটিশরা এসে বানিজ্য করে যেতো। আমাদের সময়েও দেখেছি ৮০ কিংবা ৯০ দশকের কথা যদি বলি অত্র মাদারগঞ্জ এর মধ্যে গুনারীতলাবাসী ছিলো উন্নত। আজ সেই ধারাবাহিকতা ধরে যদি সুত্র মিলাই তবে বলতেই হয় আজ আমরা গুনারীতলাবাসী হেরে গেছি। মাথানত করেছি ওদের বিরুদ্ধ রাজনীতির কাছে যা ওরা যুগযুগ ধরে প্রত্যাশা করে এসেছিল। #আজ সত্যিকার অর্থেই আমতা অবহেলিত।
যুগে যুগে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রত্যেকটা সমাজে একজন নেতৃস্থানীয় নেতার আবির্ভাব হতো আর সেই নেতা সমাজ উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়ে ঐতিহ্যকে ধরে রাখেন।
এবার নিশ্চয়ই বলবেন নেতাতো আমাদের ছিলো। হ্যা ছিলো কিন্তু সেসব নেতারা নামে মাত্র নেতা ছিলেন জনগণের নেতা তার ছিলেননা। তারা সমাজ কিংবা এ সমাজের অবহেলিত জনগকথা ভেবে দেখেননি একবারও। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যদি কেউ এই জনপদের কথা নিয়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠতো তবে সাথে সাথে তারা বহিস্কার হতো দল থেকে।
খুব সম্ভব আশির দশকের শেষের দিকের ঘটনা। ইন্টারস্কুল ফুটবল খেলার মাঠে আমাদের গুনারীতলাবাসীকে বেদম প্রহার করেছিলো মাদারগঞ্জবাসী।
আমি সেদিন আমাদের নেতা মরহুম আব্দুল কাদের সরকারকে দেখেছিলাম প্রতিবাদ করতে কিন্তু তিনি যতবার প্রতিবাদী হয়েছেন ততবারই প্রহারিত হয়েছিলেন। অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছিলেন সেদিন। আর তারই ধারাবাহিকতায় পরদিন গুনারীতলা গ্রামে মাইকিং করা হলো। গুনারীতলা স্কুল মাঠে আগামীকাল সকাল ১০ ঘটিকার মধ্যেই যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই উপস্থিত থাকবেন। আহবানে, আব্দুল কাদের সরকার।
সেদিন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ অস্রসস্র নিয়ে হাজির হয়েছিল। এবং প্রতিবাদ স্বরুপ দলবদ্ধ ভাবে এগিয়ে গিয়েছিলো মাদারগঞ্জে। আমি সেদিন একেবারেই সামনের সারিতে ছিলাম। একেবারেই আমাদের নেতার সন্নিকটে। একজনের কাধে ছিলো সারে সাত কেজি ওজনের রামদা। পিতলের কালার একদম ঝিকঝিক করছিল।
আমাদের দল যখন বালিজুড়ির মোড়ের আগে দারোগাবাডির মোরে পৌঁছেছিলো তখন একটা মটর সাইকেলে সামনে এগিয়ে এলেন একজন যাকে আমরা মীর্জা কাসু নামে চিনতাম।
হ্নডাটা রেখে সামনে এসে দাঁড়াতেই নাম বলছিনা আমাদের মধ্যে যার হায়ে সারে সাত কেজি ওজনের রামদা ছিলো তিনিই সোজা রামদাটি মীর্জা কাসুর ঘাড়ের উপর ধরলো। মীর্জা কাসুর চোখ মুখ্র তখন অমানিশির অন্ধকার।
বলিষ্ঠ দেহধারী আমাদের নেতা আন্দুল কাদের সরকার ধম দিয়ে বললেন, খবরদার অমুক, তুমি একাজ করোনা। তবুও সে পুনরায় তিনবার কেবল আব্দুল কাদের সরকার এর অনুমতির প্রত্যাশা করর বলেছিলেন, নেতা হুকুম দেন ধরটা ফেলে দেই। আমি আজোও সেই দৃশ্য স্মরণে বিস্মিত হই। কি দিংুলো গেছে আমাদের। কত সাহসী নেতা ছিলো আমাদেদ। কত সুসংহত সুসংগঠিত ঐক্য ছিলো আমাদের।
জনস্রোতের দাবী বালিজুড়ি বাজারে হামলা করবে। কিন্ত অকস্মাৎ প্রচন্ড বৃষ্টিপাত শুরু হলো অন্যদিকে আমাদের নেতার নিষেধাজ্ঞা আর এগুনো যাবেনা। ফের উল্টো পথে আমরা আমাদের হন্তব্যে ফিরে আসি।
থেকে মীর্জা কাসুর ছেলে মীর্জা আযমের প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে গুনারীতলাবাসীর উপর যার প্রতিবাদ কিংবা প্রতিহত করার মত কোন সাহসী নেতার আজও জন্ম হয়নি। আমরা গুনারীতলাবাসী হারাতে হারাতে নি:স্ব হতে বসেছি।