দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরেই নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই অংশ হিসেবে এখন থেকে আর সুনির্দিষ্ট কোনও দেশকে নিশানা নয়, বরং ‘পারস্পরিক শুল্ক’ (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) চাপানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিলের গোড়ায় নতুন শুল্ক নীতি চালু করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে ভারতের রফতানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সমীক্ষক সংস্থা সিটি রিসার্চ।
কোন কোন ক্ষেত্রে সর্বাধিক আঘাত আসতে পারে, তার তালিকাও দিয়েছে তারা। সিটি রিসার্চের অনুমান, ট্রাম্প ‘পারস্পরিক শুল্ক’ চাপালে ভারতের সম্ভাব্য বার্ষিক লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭০০ কোটি ডলার। সবচেয়ে ক্ষতি হতে পারে গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাগুলোর এবং কৃষি ক্ষেত্রে।
সমীক্ষকেরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতিতে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে রাসায়নিক, সঙ্কর ধাতুর তৈরি পণ্য, অলঙ্কার, ওষুধ, গাড়ি এবং খাদ্যপণ্য।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভারতের সরকারি তথ্যানুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৭,৪০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করে ভারত। এর মধ্যে মুক্তা, অন্য রত্ন এবং গয়নাই ছিল ৮৫০ কোটি ডলারের।
এছাড়াও গত বছর ৮০০ কোটি ডলারের ওষুধ এবং ৪০০ কোটি ডলারের পেট্রোপণ্য আমেরিকায় রফতানি করে একাধিক ভারতীয় সংস্থা। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ১১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল নয়াদিল্লি।
এই অঙ্ক ছিল ভারতীয় পণ্যের উপর মার্কিন শুল্কের চেয়ে প্রায় ৮.২ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে গত বছর ৪,২০০ কোটি ডলার মূল্যের সামগ্রী আমেরিকা থেকে আমদানি করেছিল ভারত। এর মধ্যে কারু শিল্পজাত পণ্য এবং যন্ত্রপাতির উপর সাত শতাংশ, জুতো এবং পরিবহণ সরঞ্জামের উপর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং খাদ্যদ্রব্যের উপর ৬৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে নয়াদিল্লি। ফলে ঘরোয়া বাজারে এই সামগ্রীগুলোর দাম যথেষ্টই চড়া ছিল।
সিটি রিসার্চের সমীক্ষকদের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন কৃষিপণ্যের উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করলে আখেরে লোকসান হবে ভারতেরই। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কৃষি ও খাদ্যশস্য কম পরিমাণে রফতানি করে নয়াদিল্লি। শুল্কের পার্থক্য বেশি হওয়ার কারণেই এত দিন এতে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছিল।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কম শুল্ক-পার্থক্যের কারণে ভারত-মার্কিন বাণিজ্যে কাপড়, চামড়া এবং কারুশিল্প বা কাঠের তৈরি পণ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। বহু মার্কিন সংস্থা এই পণ্যগুলো দক্ষিণ এশিয়াতেই তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া বাজারে কম শুল্ক থাকায় সেখানে এই পণ্যগুলো বিক্রি করে বেশি লাভ করতে পারেন তারা।