সময় আর নদীর স্রোত কাউকে সমীহ করেনা। সময়ের সাথে যে মানুষটি অহমিকায় মেতে উঠে খুব সাবলীল ভাষায় সময় তার প্রতিদান দিয়ে যায়। যে কারও হৃদয় ভাঙলো সময় তার হৃদয়টকে টুকরো টুকরো করে দিয়ে যায়। আর নদীর স্রোত? সেও এক ভয়ংকর পরিক্রমাশালি।যে তার বিপরীতে হাটার নুন্যতম সাহস দেখাইলো সে যেন নিজের কপালে নিজেই কুড়াল মারিলো।
সংসার জীবন নাট্যশালা এ এক ক্ষনিক নিনাস। নির্ধারিত স্বল্প সময়ের প্রেক্ষাগৃহ যা স্বয়ং প্রভুর থেকে নির্দেশিত। যুগে যুগে আমরা কেবলি এখানে আসি ক্ষনিক সময়ের জন্য ফের হারিয়ে যাই আর এই ক্ষনিক সময়ে কেউ কেউ নিজেকে এতোটাই সীমা অতিক্রম করে নিয়ে যায় যে, তার আর শোধরে নেবার পথ কিংবা সুযোগ থাকেনা।
এমনি অসংখ্য দেশ বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বিশ্বের নামীদামী মানুষগুলো। তেমনি আমাদের দেশের একজন নন্দিত লেখকের কথা বলছি। কল্পকাহিনির উপন্যাসের মত বাস্তব জীবনকেও যিনি নানা উপমায় রঞ্জিত করে তুলেছিলেন তিনি হলেন হুমায়ুন আহমেদ।
হুমায়ুন আহমেদ এর দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এর একটি ভেরিফাই ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া স্মৃতি বিজড়িত কিছু কথা তুলে ধরলাম:
একদিন লক্ষ করলাম, সে (শাওন) ঝিম ধরে কম্পিউটারের ফেসবুকের পাতার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের পাতায় অশ্রুবিন্দু।
আমি বললাম, সমস্যা কী?
কেয়ারগিভার বলল, কোনো সমস্যা না। সামান্য মন খারাপ। কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।
আমি বললাম, আমাকে বলো, দেখি, মন খারাপ কাটানোর চেষ্টা করতে পারি কি না।
-তোমাকে বলব না। তোমার মন খারাপ হবে।
আমি বললাম, সহজে মন খারাপ হবে, এমন মানুষ আমি না। বুঝতে পারছি, ফেসবুকে পাঠানো কারও কমেন্ট পড়ে তুমি আপসেট হয়েছ। কী লিখেছে?
শাওন পড়ে শোনাল। কেউ একজন লিখেছে, তোমার উচিত শিক্ষা হয়েছে। আমি খুশি যে তোমার স্বামীকে ক্যানসার দিয়ে আল্লাহ তোমাকে শিক্ষা দিলেন। এই শিক্ষা তোমার আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল।
শাওনের মেয়ে লীলাবতী যখন মারা গেল, তখনো সে এ ধরনের চিঠিপত্র পেত। লেখা থাকত, তোমার কঠিন শাস্তি হওয়ায় আমরা খুশি। আরও শাস্তি হবে। এই ধরনের কথা।
আমি শাওনকে বললাম, পৃথিবীতে মানসিক অসুস্থ অনেক মানুষ। তাদের নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমরা ভাবব সুস্থ মানুষদের কথা। তোমার ফেসবুকে শত শত মানুষ কত চমৎকার সব কথা লিখছে। লিখছে না?
-হ্যাঁ।
-এর মধ্যে একজনের কথা চিন্তা করো। সে চলে গেছে মক্কায়, কাবা শরিফে। সেখান থেকে তোমাকে জানিয়েছে, আমি স্যারের জন্য দোয়া করতে এসেছি। শাওন আপু, আপনি একটুও চিন্তা করবেন না। এর পরও কি মন খারাপ করা তোমার উচিত?
শাওন বলল, না, উচিত না।
-তাহলে মিষ্টি করে একটু হাসো।
-হাসতে পারব না।
বলেও সে হাসল।
আমাদের আশপাশে বিকৃত মানসিকতার মানুষের সংখ্যা কি বাড়ছে? মনে হয় বাড়ছে। একজনের কথা বলি, সে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য হাস্যকর কাণ্ডকারখানা শুরু করল। একটা পর্যায়ে গেটের সামনে স্ট্রাইক করার মতো অবস্থা। মহা বিরক্ত হয়ে তাকে আসতে বললাম। ২৩-২৪ বছরের যুবক। কঠিন চোখমুখ। আমি বললাম, এখন বলো, আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য এত ব্যস্ত হয়েছ কেন? বিশেষ কিছু কি বলতে চাও?
-চাই।
-তাহলে বলে ফেলো।
-আপনার লেখা আমার জঘন্য লাগে।
-এই কথাটা বলার জন্য এত ঝামেলা করেছ?
-হ্যাঁ! কারণ সরাসরি এই কথা আপনাকে বলার কারোর সাহস নাই। সবাই আপনার চামচা।
-আমি বললাম, আরও কিছু কি বলবে?
-হ্যাঁ।
-বলে ফেলো।
সে ইংরেজিতে বলল, আই ওয়ান্ট ইউ টু ডাই সুন।
আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম (ইংরেজিতে), আই হোপ অ্যান্ড প্রে ইউ হ্যাভ আ লং অ্যান্ড মিনিংফুল লাইফ।”
#হুমায়ূন_আহমেদ
(নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ)