দেশে আত্মহত্যা প্রবণতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যদিও জাতীয়ভাবে পর্যায়ে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩২ জন মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১১ সালে আত্মহত্যার গড় হারে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বে ৩৮তম; কিন্তু মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ উঠে আসে দশের ঘরে। এরপর থেকে বৈশ্বিক পরিসংখ্যানে দেশের অবস্থান শীর্ষ দশেই আটকে আছে।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি বছর অন্তত প্রায় ১৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে ঝিনাইদহে।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনে (১০ সেপ্টেম্বর) দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্টার্ট দ্য কনভারসেশন বা এখনই আলোচনা শুরু করুন।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আত্মহত্যা একটি জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর আত্মহত্যার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে অভিমান। জেনারেশন গ্যাপের কারণে সন্তান এবং বাবা-মা একে অন্যকে বুঝতে ব্যর্থ হন অনেক ক্ষেত্রেই। এতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এ যুগের তরুণ-তরুণীরা বেশিরভাগই মানসিকভাবে ভঙ্গুর প্রকৃতির, যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। তাই আত্মহত্যা থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে অভিভাবক ও মা-বাবাদের দৃষ্টি দেওয়াসহ শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মনোযোগী হওয়া জরুরি।
বাংলাদেশে আত্মহত্যার কারণগুলো হচ্ছে, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন, শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতা, পারিবারিক কলহ এবং সম্পর্কের বিচ্ছেদ, মাদকের ব্যবহার, অর্থনৈতিক সমস্যা, পড়াশোনার চাপ, বেকারত্ব, পারিবারিক আত্মহত্যার ইতিহাস ইত্যাদি। আত্মহত্যার ঝুঁকির লক্ষণগুলো হচ্ছে মৌখিক হুমকি, ঘন ঘন
মৃত্যু-সংক্রান্ত ইচ্ছার কথা বলা, যখন দেখছেন আপনার সন্তান বা কাছের মানুষটি হঠাৎ করেই চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে, তার চেহারা, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উদাসীন বা ওজন খুব দ্রুত বাড়ছে বা কমছে, ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়াতে মৃত্যু নিয়ে বেশি পোস্ট বা ঘটনা দিচ্ছে, শরীরে অপ্রত্যাশিত আঘাতের চিহ্ন ইত্যাদি।
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া ব্যক্তিরা আমাদের কাছে একটি সংখ্যা হলেও পরিবারের কাছে তারা বেঁচে থাকার অবলম্বন। আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রথম পদক্ষেপ পরিবার থেকে শুরু করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মতো প্রকাশের অধিকার, একে অন্যের প্রতি সম্মান এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান খান বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি এবং সমাজ বা সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হলো পরিবারের সদস্য, বন্ধু, সহকর্মী বা এমনকি কোনো অপরিচিত ব্যক্তি যারা বহুবিধ যন্ত্রণার মধ্যে আছেন বলে প্রতীয়মান হয়, তাদের প্রতি নজর রাখা এবং নিঃসংকোচে তাদের সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করা। এরূপ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সাহায্য নিতে উৎসাহিত করতে হবে। এ ধরনের অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে খোলা মনে আলোচনা করতে হবে। আশা করা যায়, এরূপ আলোচনা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের আত্মহত্যা প্রবণতা থেকে ফিরে আসতে সাহায্য করবে।’