বুধবার, জানুয়ারি ৮, ২০২৫
Homeজাতীয়জামালপুর এর ইতিহাস ঐতিহ্য

জামালপুর এর ইতিহাস ঐতিহ্য

ডেস্ক রিপোর্ট

জামালপুর জেলার পূর্বে ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলা, পশ্চিমে যমুনা নদী ও বগুডা জেলা, উত্তরে শেরপুর ও কুড়িগ্রাম এবং দক্ষিন টাঙ্গাইল জেলা অবস্হিত।

জানালপুর জেলার নামকরণ। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, দিল্লির সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে (১৫৫৬- ১৬০৫) হযরত শাহ জামাল (রহ.) নামে একজন ধর্মপ্রচারক ইয়েমেন থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ২০০ অনুসারী নিয়ে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। পরবর্তীতে ধর্মীয় নেতা হিসাবে দ্রূত তার প্রাধান্য বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীতে হযরত শাহ জামাল (রহ.) এর নামানুসারে এই শহরের নামকরণ হয় জামালপুর।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলির মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ (১৭৭২-১৭৯০) সালে। নীল বিদ্রোহ (১৮২৯)সালে। দুর্ভিক্ষ (১৮৭৪) সালে এবং রেলপথ স্থাপন (১৮৯৯) সালে।

মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী জামালপুরে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। ২১ জুন পাকবাহিনী ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত শ্মশান ঘাটে ৯ জনকে হত্যা করে। সরিষাবাড়িতে স্থানীয় জনগণ কয়েকজন রাজাকারকে হত্যা করলে পাকবাহিনী সেখানকার ৬ জনকে হত্যা করে ও গ্রাম জ্বালিয়ে দেয।

পরবর্তীকালে পাকসেনারা বয়সিং গ্রামের আরও ১৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা বকশীগঞ্জের কামালপুর ঘাঁটি আক্রমণ করলে পাকবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, এ যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ, আহাদুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদসহ ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

১৪ নভেম্বর পাকবাহিনীর গোলার আঘাতে ক্যাপ্টেন আবু তাহের গুরুতর আহত হন। জেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ৩৩টি গণকবর ও ১টি বধ্যভূমি রয়েছে; ৪টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৮.৪%; পুরুষ ৪১.১%, মহিলা ৩৫.৯%। বিশ্ববিদ্যালয় ৫, কলেজ ৩৯, কারিগরি কলেজ ৯, হোমিওপ্যাথি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৮৫, কারিগরি বিদ্যালয় ৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮২০, স্যাটেলাইট স্কুল ১৬, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৯, মাদ্রাসা ৩০৮, অন্যান্য ১৪৯।

জামালপুর জেলায় উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বলরিদিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৬৯), পিংনা ইংলিশ হাই স্কুল (১৮৭৯), জামালপুর জিলা স্কুল (১৮৮১), জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), পোগলদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯০), পিংনা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), সিংহজানি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), ঝাড়কাটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), সিংহজানী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), দেওয়ানগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), সরিষাবাড়ী রাণী নিদমণি মডেল হাই স্কুল (১৯২০), হাজরাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), নান্দিনা মহারাণী হেমন্ত কুমারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৫), সরকারি আশেক মাহ্মুদ কলেজ (১৯৪৬), সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজ (১৯৬৭), মাদারগঞ্জ এএইচ জেড সরকারি কলেজ (১৯৬৮), ইসলামপুর কলেজ (১৯৭০), পিংনা মাদ্রাসা।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৫.৫০%, অকৃষি ৩.৩০%, শিল্প ০.৮১%, ব্যবসা ১১.৮৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯৪%, নির্মাণ ১.২২%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, চাকরি ৫.৭৬%৬, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩০%, অন্যান্য ৮.১০%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: জনবাংলা, পল্লীর আলো; সাপ্তাহিক: সচেতন কণ্ঠ, পূর্বকথা, জামালপুর সংবাদ, জনক, জামালপুর সাতদিন, জগৎ, নবতান, সাপ্তাহিক ঝিনাই, সাপ্তাহিক ঊর্মি বাংলা, সাপ্তাহিক জামালপুর বার্তা, সাপ্তাহিক কালাকাল, সাপ্তাহিক মুক্ত আলো, গাঙচিল; সাহিত্য পত্রিকা: পাতায় পাতায়, লোক, ঋদ্ধি, ছন্দে ঝিনাই, ময়ূখ (অনিয়মিত); অবলুপ্ত: মাসিক পল্লীমঙ্গল (১৯২২), হানিফি (১৯০৩), জামালপুর বার্তা, পল্লীবাণী, শিল্প-সাহিত্যপত্র।

লোকসংস্কৃতি এ জেলায় গুনাইবিবির গান, খায়রুনের জারি, রূপভানের পালাগান, পাঁচালী, ঘেটু গান এবং বিয়ে, গায়ে হলুদ উপলক্ষে মেয়েলি গান প্রভৃতির প্রচলন রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে ষাড়ের লড়াই, ঘোড়দৌড়, মইদৌড়, লাঠিখেলা ইত্যাদি প্রতিযোগিতামূলক খেলার এবং বর্ষাকালে যমুনা নদীতে নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়। জেলার গারো সম্প্রদায় ‘বিগান গালা উৎসব’ উপলক্ষে নৃত্যগীত পরিবেশন করে।

দর্শণীয় স্থান ফুলকোচা ও মহিরামকুলে অবস্থিত জমিদারদের কাচারি (বিলুপ্ত প্রায়) ও দিঘি (মেলান্দহ উপজেলা), তারতাপাড়া ৩নং গুনারীতলা ইউনিয়ন এর গুনারীতলা গ্রামের বিলুপ্তপ্রায় নীলকুঠি (মাদারগজ্ঞ উপজেলা), নরপাড়া দূর্গ (সরিষাবাড়ী উপজেলা), রাধানাথ জিউর মন্দির, নান্দিনার শোলাকুড়ি পাহাড়, শ্রীপুরের রানীপুকুর দিঘি, চন্দ্রার হরিশচন্দ্রের দিঘি (জামালপুর সদর উপজেলা), প্রদ্যোৎঠাকুরের কুঠিবাড়ি (ইসলামপুর উপজেলা), গারো পাহাড় (বকশীগজ্ঞ উপজেলা)।

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; জামালপুর জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; জামালপুর জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।

- Advertisement -spot_img
আরও সংবাদ
- Advertisement -spot_img
এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here