বুধবার, জানুয়ারি ৮, ২০২৫
Homeঅন্যান্যঅবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মদিন আজ

অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মদিন আজ

অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মদিন আজ। তিনি ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলায় বাকেরগঞ্জের বর্ধিষ্ণু গ্রাম সাতুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। আইনজীবী কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ ও সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র ছিলেন তিনি।

১৯২২ সালে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলে এ. কে. ফজলুল হক খুলনা উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং নির্বাচিত হন। ১৯২৪ সালে খুলনা অঞ্চল থকে তিনি পুনরায় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং এ সময় বাংলার গভর্নর ছিলেন লিটন, তিনি ফজলুল হককে বাংলার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়োগ করেন। ১৯২৩ সালে চিত্তরঞ্জন দাশ ও মতিলাল নেহেরু-এর নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল স্বরাজ্যদল। এই দলের অন্যতম কর্মসূচি ছিলো আইনসভায় নির্বাচিত হয়ে সরকারি নীতির বিরোধিতা সহ সরকারি বাজেট বা আয়-ব্যয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা। স্বরাজ্য পার্টি ১৯২৪ সালের বাজেটের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে। এ সময় ১৯২৪ সালের ১ আগস্ট এ. কে. ফজলুল হক মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন।

১৯৩০-১৯৩১ সালের প্রথম গোলটেবিল বৈঠকে ফজলুল হক বাংলা এবং পাঞ্জাবের মুসলমানদের জন্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছিলনে। তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচনের পক্ষে বক্তৃতা দেন। ১৯৩১-১৯৩২ সালে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে কংগ্রেসও যোগ দেয়। এ বৈঠকেও সাম্প্রদায়িক প্রশ্নের সমাধান না হওয়ায় ভারতের শাসনতন্ত্র রচনার দায়িত্ব চলে যায় ব্রিটিশের হাতে।

১৯৩৫ সালে এ. কে. ফজলুল হক কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। তিনিই কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র।

অবিভক্ত বাংলা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার পর ১৯৩৭ সালে সেখানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ব্রিটিশ ভারতে প্রজা পার্টি নামে সামন্ততন্ত্রবিরোধী যে দল ছিল, ফজলুল হক সেটির রূপান্তর ঘটান কৃষক-প্রজা পার্টি নামে রাজনৈতিক দলে। ওই নির্বাচনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদে তার দল তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ এবং নির্দলীয় সদস্যদের সঙ্গে জোট গঠন করেন মি. হক এবং এ কে ফজলুল হক হন অবিভক্ত বাংলার প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।

মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত হয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশন। ২২ থেকে ২৪ মার্চ তিন দিনের ওই অধিবেশনে এক জ্বালাময়ী বক্তৃতায় প্রথম ‘পাকিস্তান গঠনের প্রস্তাব’ পেশ করেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক। ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিমের মুসলমান প্রধান অংশে ‘স্বায়ত্তশাসিত পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার দাবি সংবলিত সেই প্রস্তাব গৃহীত ও পাস হয় ওই অধিবেশনে।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে ‘লাহোর প্রস্তাব’ ছিল একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা পরে ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ নামে পরিচিত হয়। তার ওই বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে পাঞ্জাববাসীরা তাকে উপাধি দিয়েছিল শের-ই-বঙ্গাল অর্থাৎ বাংলার বাঘ। তখন থেকে তিনি শেরেবাংলা নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদের দীর্ঘ প্রধানমন্ত্রিত্বকালে তিনি বহু জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। এ সময়ে তিনি ‘ঋণ সালিশি বোর্ড’ গঠন করেন, যার ফলে দরিদ্র চাষিরা সুদখোর মহাজনের কবল থেকে রক্ষা পায়। ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হয়ে যাওয়ার পর ফজলুল হক ঢাকায় চলে যান এবং ১৯৫২ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের অ্যাডভোকেট জেনারেল নিযুক্ত হন।

১৯৫৪ সালে দেশের সাধারণ নির্বাচনে তিনি ‘যুক্তফ্রন্ট’ দলের নেতৃত্ব দিয়ে বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র গৃহীত ও কার্যকর হওয়ার পর তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়ে করাচি থেকে ঢাকা চলে যান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই পদে তিনি ছিলেন ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত।

আটান্ন সালে পাকিস্তানের এক অভ্যুত্থানের পর তাকে গৃহবন্দি করা ১৯৪০ সালে ফজলুল হকের প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছরে তার প্রচেষ্টায় মুন্সীগঞ্জে প্রতিষ্ঠা হয় হরগঙ্গা কলেজ। তার নিজের গ্রামেও তিনি একটি কলেজ এবং পাশাপাশি মাদ্রাসা ও হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফজলুল হকের উদ্যোগে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামিয়া কলেজ ও মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজ। এ ছাড়া তিনি মুসলমানদের শিক্ষিত করে তুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছিলেন। শিক্ষা বিস্তারে তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন। এ কে ফজলুল হকের জীবনাবসান হয় ঢাকায় ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল।

- Advertisement -spot_img
আরও সংবাদ
- Advertisement -spot_img
এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here