শেষ ১০ ওভারে ১০৫ রান তোলেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের, ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন বাংলাদেশের সেরা জুটি। এই জুটিতেই স্কোরকার্ডে জমা হয়েছে বড় সংগ্রহ। যা পাড়ি দিতে রেকর্ড গড়তে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
শুরুর দুঃসময় ভুলিয়ে দিয়ে দারুণ এক জুটি গড়লেন হাফ সেঞ্চুরি করা সৌম্য সরকার ও মেহেদী হাসান মিরাজ। কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে তাদের বিদায়ে বাংলাদেশ যখন হঠাৎ-ই চাপে, তখনই ত্রাতা হয়ে হাজির মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলী অনিক। দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে এ দুজন ব্যাটিং করলেন ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে রেকর্ড জুটি গড়লেন, যেটার শেষ অংশে থাকলো মাহমুদউল্লাহ ঝড়। চার হাফ সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহ গড়লো বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং করে ৫ উইকেটে ৩২১ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করে এটাই তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ, সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সেরা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটা সপ্তম সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আজকের ম্যাচে জিততে রেকর্ড গড়তে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এই মাঠের সর্বোচ্চ রান তাড়া ২৯৫, এই সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই এই রান তুলে রেকর্ড গড়ে স্বাগতিকরা। আজ জিততে হলে রেকর্ড আবার নতুন করে লিখতে হবে তাদের।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। আগের দুই ম্যাচের মতো আজ রানের দেখা পাননি তানজিদ হাসান তামিম, দলীয় ৯ রানে ফিরে যান তিনি। এই ওভারে আরও চাপ বাড়ে বাংলাদেশের, ফিরে যান লিটন কুমার দাসও। লম্বা সময় ধরে রান খরায় ভোগা এই ব্যাটসম্যানও তানজিদের মতো শূন্য রানে আউট হন। এ নিয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২১ ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরিহীন থাকলেন লিটন।
চলতি সিরিজে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তিন ওয়ানডেতে তার রান ৬। প্রথম ওয়ানডেতে ৭২ বলে ২ রান করা উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ম্যাচে ১৯ বলে করেন ৪ রান। আজ দ্বিতীয় বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৯ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন দিকহারা। এখান থেকে হাল ধরেন আগের দুই ম্যাচে অনুজ্জ্বল থেকে যাওয়া সৌম্য ও মিরাজ।
চাপ সামলে দ্রুততার সঙ্গেই উইকেটে থিতু হয়ে যান এ দুজন। শুরুতেই ধীর-স্থির ব্যাটিং করলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত রান তোলায় মনে দেন সৌম্য ও মিরাজ। একটা সময়ে গিয়ে দাপুটে ব্যাটিং করতে থাকা বাংলাদেশের এই দুই ব্যাটসম্যান। তৃতীয় উইকেটে ১২৭ বলে ১৩৬ রানের জুটি গড়েন সৌম-মিরাজ। যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি।
তৃতীয় উইকেটে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা জুটি, বিদেশের মাটিতেও তাই। এই ফরম্যাটে ৫ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া সৌম্য ৭৩ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৩ রান করেন। ওয়ানডেতে এটা তার ত্রয়োদশ হাফ সেঞ্চুরি। দলকে ১৪০ ছাড়িয়ে দিয়ে আউট হন সৌম্য। তার বিদায়ের পর আরও কিছুটা সময় উইকেটে থাকেন অধিনায়ক মিরাজ।
উইকেটে থিতু হয়ে দারুণ ছন্দময় ব্যাটিং করে যাওয়া মিরাজকে হতাশ হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়। ৭০ এর ঘরে আউট হওয়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান রান আউটে কাটা পড়েন। এর আগে ৭৩ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৭ রান করেন তিনি। ওয়ানডেতে এটা তার ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি। পরের ওভারে থামেন আফিফ হোসেন ধ্রুবও। আগের দুই ম্যাচের মতো আজও সাবলীল শুরু করেন তিনি, কিন্তু আজও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ১৫ রান করে ফিরে যান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশের ইনিংসের বাকি অংশ রাঙিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর চাপ সামলে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেন এ দুজন। শেষ ১০ ওভারে ১০৫ রান তোলেন দুজন। ১১৭ বলে ১৫০ রানের জুটি গড়েন তারা, যা ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সেরা। জুটিতে বেশি অবদান দুর্বার ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহর। একটা সময়ে ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন তিনি।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩২তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৬৩ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন। চলতি সিরিজের তিন ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি করলেন মাহমুদউল্লাহ। ৫৭ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় হার না মানা ৬২ রান করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া জাকের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার আলজারি জোসেফ ১০ ওভারে ৪৩ রানে ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান গুডাকেশ মোটি ও শারফেন রাদারফোর্ড।