আচ্ছা বলতো কবি এতো এতো ভাব এতো এতো ভাষা এতো কথার ব্যঞ্জনা তুমি কোথা হতে আনো। কবি তার গোফ আর দাঁড়ি ভরা মুখ নাড়িয়ে শুধু মুচকি হাসে। বলি আমিওতো কবি লিখালিখি করি কিন্তু তোমার প্রতিটা গল্প প্রতিটা কবিতার চরণে চরণে যে এতো মধুরতা বাপের জনমেও কারও দেখিনি বাপু।
কবি তখনও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেকের ধারের বেঞ্চটিতে বসে আকাশপানে উদাসীনতায় তাঁকিয়ে ছিল। এদিকে অরণ্য রেজা গড়্গড় করে প্রশংসা তার করেই যাচ্ছিল। কবি তুমি জানোনা “সুলেখা আমার স্ত্রী, সেতো তোমার গল্প আর কবিতা রীতিমতো আহারে পরিনত করে ফেলেছে। তাকে খেতে বললে বলে আমিতো খাচ্ছি, লেখকের গল্পই আমার আহার তার কবিতাই আমার রোজ বিকেলের নাস্তা।
জানো কবি, একজন কবি কিংবা লেখকের লেখার স্বার্থকতা কোথায়? আমি বলি, আমার স্ত্রীকে দেখলেই তা বুঝি তুমি একজন সার্থক কবি।
সেদিন আমার স্ত্রী সুলেখা আমাকে বলছিলো, অবশ্যই সুলেখা নামটা সে আমারই দেওয়া। এটা তার আসল কোন নাম নয়। সে লিখে ভালো বলে আদর করে তাকে আমি ‘সুলেখা’ বলে ডাকি।
সে বলছিল, তার আরেকটা নাম আছে মাধবীলতা। তার এক বন্ধু নামটা রেখেছিলো। বন্ধুটির নাম ছিল ‘অরণ্য অনুর’। হারিয়ে গেছে সে অনেক বছর। আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, মাধবীলতা, তুমি কি তাকে ভালোবাসতে? তোমরা দু’জনেই কি দু’জনকে ভালোবাসতে?
মাধবীলতা ঠিক তোমার মতই ফেলফেল করে তাকিয়েছিল বেশক্ষণ তারপর বলেছিল কেন, ভালোবাসা কি পাপ? বলেছিলাম, না না পাপ হবে কেন। বিয়ের পূর্বেতো অনেকেই অনেককে ভালোবেসে থাকে কিন্তু সেই ভালোবাসার স্থায়িত্বটাতো নির্ভর করে উভয়ের যে কোন একজনের বিয়ের পর। তবে তুমি কি তাকে এখনও ভালোবাসো প্রীতিলতা? মাধবীলতা উত্তর দিয়েছিল, জানিনা, মন জানে।
মাঝে মাঝে তোমার কবিতা তোমার গল্প পড়ে মাধবীলতা বলে কি জানো, তুমি নাকি তার অনেক বছরের চেনা। আমায় জিজ্ঞেস করে রেজা তুমি কি জানোনা কে এই কবি, কে এই বিয়োগাত্মক লেখক, কে এই অগ্নিঝরা সাহিত্যিক! তুমি কি তাকে কিছুটাও চিনোনা?
আমি বলি মাধবীলতা, সে আমার স্বল্প সময়ের পরিচিত বন্ধুমাত্র তাও এই বই মেলায় দেখার পর। তাকে এতটা কি করে চিনি বলো। ব্যক্তিগতভাবে এতটা কি করেইবা জানি বলো। তার কিছুটাই যে আমি চিনিনা তার কিছুটাই যে আমি জানিনা। কখনও জিজ্ঞেসও করিনি বন্ধু তুমি কে?
তবে যতটুকু জানি সে একজন বিরহী কবি, মরমী কবি, বিয়োগান্তক কবি! চিরকুমার সে। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। আসল নামটাও তার জানা হয়নি আমার। লেখক হিসেবে যে নামটা ‘বিরহ কহর’ সে নামেই আমি তাকে চিনি। অবশ্যই একদিন জানতে চেয়েছিলাম বন্ধু তোমার আসল নাম কি? বলেছে সে, যে আমায় ‘বিরহের কহর’ নামটা ভালোবেসে উপহার দিলো সেই নামটাকে কি করে উপেক্ষা করি বলো! কি করে! এরপর আর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি।
কবি তখনও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেকের পাড়ের নীল আসমানের মাঝে তার অতীতটাকে জীবন্ত করে দেখছিল। কবিদের প্রতিভার অসংখ্য দৃষ্টি থাকে তা কেবল একজন কবিই তা উপলব্ধি করতে পারে।
অরণ্য রেজা তা বেশ ক’দিনের সান্নিধ্যেই উপলব্ধি করতে শিখে গিয়েছিল। এবার কবি যেন জীবন্ত হলেন অরণ্য রেজার দিকে চোখ তুলে তাকালেন তাকালেন।
অরণ্য রেজা অনুভব করলো, কি তার রক্তকমল চোখ যেন বিষন্নতার অন্তরিক্ষ যেন নয়নপটে অগ্নিগিরির অগ্নুৎপাত দাওদাও করে জ্বলছে।
মাধবীলতা! সেই বারুদ দালানের পর যে হাজারো ফুলের সমারোহে যে লতা ঝুলেছিল বহুযুগ আগে তার থেকে কিছু ফুল তুলে গুযে দিয়েছিলাম নয়ন নিতার লোপা চুলে তবে কি সেই মাধবীলতা! মাধবীলতা, আমার অস্তিত্বের আরাধ্য দেখা হয়না কতকাল!
বন্ধু অরণ্য রেজা, কি যেন বলছিলে কার নামটি যেন বলছিলে। বলো আরেকটা বার নামটি ধরর বলো। অকস্মাৎ লুটিয়ে পড়লো মাটিতে তারপর..