পাহাড়ি কন্যা নুখিংসাই মারমা, এই বছর বিজিবির রিক্রুট ব্যাচে নারী সেরা সৈনিক হয়েছেন। সেরার পুরস্কার গ্রহণ শেষে গণমাধ্যমে জাস্ট একবাক্যের ইন্টারভিউ দিলেন— ‘পুরুষ সদস্যেদের পাশাপাশি আমি নারী সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের ভূখণ্ড রক্ষার্থে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব।’
৬ মাসের কঠোর পরিশ্রম শেষে নুখিংসাই বিজিবিতে রিক্রুট হয়েছেন এবং চৌকস সৈনিক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে ব্যাচে সেরা হয়েছেন। তবে বিজিবিতে ওঠে আসার যাত্রাটা মোটেও তাঁর জন্য সহজ ছিল না।
বান্দরবানে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছায় তাদের বাড়ি। তাদের গ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাই। গ্রামে যে কয়জন ভালো পড়াশোনা গ্রহণ করেছে/করছেন তাঁরা কয়েকমাইল হেঁটে দূর গ্রামে গিয়ে পড়াশোনা করছেন। তাঁর বাবা কৃষক; মা গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে নুখিংসাই সবার ছোট। বড় দুই বোন তেমন একটা পড়াশোনা করতে পারেনি।
সীমান্তঘেঁষা গ্রাম হওয়ায় ছোটবেলায় বিজিবির সদস্যেদের দেখে তাঁর মনের ভেতর স্বপ্ন বুনেন বিজিবি সদস্য হওয়ার। বাবা-মা তাঁর স্বপ্নপূরণের জন্য বান্দরবান শহরে পড়াশোনা করিয়েছেন। কালেক্টরেট কলেজ থেকে এইচএসসি শেষে বিজিবির ১০২তম রিক্রুট ব্যাচে আবেদন করেন। প্রাথমিক ধাপে সিলেক্টেড হয়ে ৬ মাসের ট্রেনিং শুরু করেন। অনেকে চ্যালেঞ্জে টিকতে না পেরে ট্রেনিং থেকে ঝরে গেছেন। ১০২ ব্যাচে নুখিংসাইদের সাথে ৪৬জন নারী শেষ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ শেষ করে বিজিবির রিক্রুট হয়েছেন। তাদের সবার মধ্যে সে সেরা সৈনিক হন।
দৈনিক আজাদীতে তাকে নিয়ে একটা স্টোরি করেছে, সেই স্টোরিতে পড়লাম সে বলছে, ‘আমাদের গ্রামের মেয়েরা খুব বেশি পড়ালেখাও করতে পারে না। স্কুলজীবন থেকেই বিয়ে হয়ে যায় বেশিরভাগ মেয়ের। আমি বিজিবিতে যোগদানের পর গ্রামের মানুষ অনেক খুশি। আমি তাদের কাছে একজন গর্ব।’
যে গ্রামে মেয়েরা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে শিক্ষার আলোর আর দেখতে পাননি। বিয়ের পীড়িতে বসিয়ে দেওয়া বাবা-মায়ের গুরুদায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়, নিশ্চিতভাবে সেই গ্রামের মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত হয়ে স্বতন্ত্র পেশাগত পরিচয় তৈরি করতে বেশ
অনুপ্রাণিত করবে নুখিংসাইয়ের সাফল্যে।
নুখিংসাই আপনার জন্য শুভকামনা। গ্রামের নারীদের জন্য যেন হয়ে ওঠতে পারেন আলোর উৎস। দেশমাতৃকার ভূখণ্ড রক্ষা করার গুরুদায়িত্ব আপনাদের কাঁধে। কমিটমেন্টের প্রতি দৃঢ় অবিচল থেকে সাড়ে ৪হাজার কিলোমিটার সীমান্ত ভূমি আপনারা সুরক্ষিত রাখলে নিরাপদ থাকবো আমরা।