বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ৯, ২০২৫
Homeঅর্থনীতিদেশে আসছে ১৩ বিলিয়ন অধিক ডলার

দেশে আসছে ১৩ বিলিয়ন অধিক ডলার

বার্তা বাংলা ২৪ ছবি: সংগৃহীত

দেশটার আর্থিক খাত যখন ভয়াবহ চ্যালেঞ্জে এর মুখোমুখি ঠিক তখন উদার মানবতার মহান মানুষটি দায়িত্ব গ্রহণ করলেন বাংলাদেশের। দীর্ঘ পনের বছরের দুঃশাসন আর দুনীতির আখড়ায় পরিপূর্ণ এ দেশ, এদেশের প্রতিটি সেক্টর তা জেনেও উদার মানবিকতার এক মহামানব দেশটাকে সংস্কার করার মানষে, নিপিড়ীত নির্যাতিত ১৮ কোটি মানুষের জীবন্নে এক বিন্দু হাসি ফোটাবার তীব্র মন আর মানসিকতাকে পুজি করে, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দৃঢ প্রত্যয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব ভার গ্রহন করে এক বিরল ইতিহাসতৈরী করলেন।

বিশেষ করে, অর্থ পাচার আর ডলার সংকটে যখন দেশের রিজার্ভ তলানিতে, ঠিক সেই ক্ষণে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর সহায়তায় রিজার্ভের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস । এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি) ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাসহ (ইউএসএআইডি) বেশ কয়েকটি সংস্থা ও দেশ বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এসব অর্থ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডলার সংকট ও রিজার্ভের পতন থেমে দেশের আর্থিক খাত ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এটা আয়নার মত স্পষ্ট এবং দিনের আলোর মত পরিস্কার যে, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকা কালীন সময়ে দেশে যখন আর্থিক সংকটে পড়ে, ঠিক সে মুহুর্তে আইএমএফ থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ চাইলে সংস্থাটি ওই প্যাকেজের আওতায় ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও দেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কারের শর্ত জুড়ে দেয়। এমনকি বারবার সফরে এসে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় দেশের আর্থিক খাতে অনেকটাই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। অথচ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঋণ চাওয়ার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঋণ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এটি সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র আন্তর্জাতিক বিশ্বে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবমূর্তির কারণেই।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অবস্থায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটা ম্যাজিকের মত বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন । এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় অঙ্কের ডলার পাওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তাকে। এর বাইরেও নেপালের পক্ষ থেকে জলবিদ্যুৎ, চীনের পক্ষ থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগ সোলার প্লান্ট স্থাপন, জ্বালানি আমদানিসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তারও আশ্বাস আশবাস এর আগেও ড. ইউনূস বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন অধিবেশনে যুক্ত হয়েছেন। তবে সে সময় তিনি একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে সেখানে যুক্ত হন। তবে এবারই প্রথম বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে জাতিসংঘে গেলেন তিনি। এ জন্য বিশ্বে নেতাদের মধ্যে তাকে নিয়ে দেখা গেছে উচ্ছ্বাস।

তার এই প্রয়াস তার এই চেস্টা যেন একজন বাবার প্রচেষ্টার মত। সন্তানের অসহায়ত্ব দেখলে একজন বাবা যেমন ব্যকুল হয়ে উঠেন তিনি তার চেয়েও যেন অধিক ব্যকুল। দেশ বাঁচানোর সংগ্রামে তিনি বিশ্বনেতাদের কাছে নিজে কখনও কাজটাকে ছোট করে দেখছেনা। দেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা যখন খুবই নাজুক যে দেশ থেকে থ কয়েক লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ফলে এ ঋণগুলো পাওয়া গেলে ব্যাংকিং খাত একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আসবে বলে আশা করা যায়। সেইসঙ্গে রিজার্ভ বাড়বে এবং ডলারের দামও স্থিতিশীল হবে। এভাবেই দেশের পুরো অর্থনীতি একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে ফিরে আসবে।

এক সূত্রে জানা গেছে, আগামী তিন বছরে একটা প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশকে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে আইএসডিবি। বিভিন্ন খাতের জন্য এ অর্থ দেবে তারা। এ ছাড়া, ডিসেম্বরের মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এডিবি। সংস্থাটি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি খাতে সংস্কারের জন্য দেবে ৫০ কোটি ডলার। এটা পাওয়া যাবে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে। এর বাইরে জ্বালানি খাতের উন্নয়নেও এডিবির কাছে ১০০ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটি চলমান প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলারের বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। সব মিলিয়ে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ১ হাজার ৩৬০ কোটি বা সাড়ে ১৩ বিলিয়নের বেশি ঋণ সহায়তা পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডলার সংকট কাটাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে কোনো মূল্যে ডলারের মজুদ বাড়াতে চাচ্ছে। নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। বরং রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়িয়ে ডলারের মজুদ বাড়াতে চাচ্ছেন। এরই মধ্যে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে। ইতোমধ্যেই রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার আশ্বাসে বোঝাই যাচ্ছে যে, ড. ইউনূস সেখানে বেশ সমীহ পাচ্ছেন। তাকে সবাই আগে থেকে চেনেন, নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। তবে এবার তিনি একটি বাড়তি পরিচয় নিয়ে সেখানে গেছেন। সেটি হলো বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বগুণে উচ্চপর্যায়ে একটি সাফল্য পাওয়া গেছে। এখন এই ঋণ পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। আর্থিক খাত, জ্বালানি খাত, রাজস্ব খাত, ব্যাংকিং নীতিমালাসহ বেশ কিছু জরুরি সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য একটি সময়োপযোগী কর্মসূচি তৈরি করে তাদের দিতে হবে। অর্থ বিভাগকে এখন এটি করতে হবে।

- Advertisement -spot_img
আরও সংবাদ
- Advertisement -spot_img
এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here