প্রস্তর যুগ থেকেই যানটির ব্যবহার করে আসছে মানুষ। সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন শুরু হয় খ্রিস্টের জন্মের ১৬০০ থেকে ১৫০০ বছর আগে। ধীরে ধীরে এই গাড়ির প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে।
গরুর গাড়ি অতীত ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ বাহন। সবুজ ঘাস আর লতা পাতা গাছ বনভূমি যেমন সৌন্দর্যের স্বর্গ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো তেমনি শত সৌন্দর্যের মাঝে আরেকটা সৌন্দর্য প্রকৃতিকে বিশেষ রুপে রূপায়িত করে তুলতো যে বাহনটি তার নাম গরুর গাড়ি।
এইতো ৮০’র দশকের কথা। হর হর করে গরুর গাড়ি নদীর এপার থেকে ওপারে অনায়াসে পার হয়ে যাইতো পার ঘাটি দিয়ে সেই সৌন্দর্যের কথা বাংলার প্রতিটি মানুষের অন্তরে গেথে আছে নিশ্চয়ই।
আদিকালে খাজনা প্রেরণ কিংবা উপহার প্রেরণের জনপ্রিয় বাহন ছিল এই গরুর গাড়ি। মালপত্র পরিবহনেও রয়েছে এর ভূমিকা। গরুর গাড়ির জনপ্রিয়তায় রচিত হয়েছে অসংখ্য গান। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা আস্তে বোলাও গাড়ি/ আরেক নজর দেখিয়া ন্যাং মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়ালসহ জনপ্রিয় আরও অসংখ্য গান।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাঝেমধ্যে যদিও গরুর গাড়ি দেখা যায় কিন্তু শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। শহরের ছেলেমেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে মফস্বলের ছেলেমেয়েরাও অনেকে গরুর গাড়ির সঙ্গে এখন আর পরিচিত নয়। জাদুঘর কিংবা নব্বই দশকের চলচ্চিত্রে গরুর গাড়ি স্মৃতি হয়ে রবে যুগ যুগ ধরে।
কিছু কাল আগেও গ্রামাঞ্চলে বিয়ে উপলক্ষে গরুর গাড়ির চাহিদা ছিল। সে সময় যেসব পরিবারে গরুর গাড়ি ছিল, তাদের ছিল আলাদা সম্মান। বর্তমানে মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতিতে চলা এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। মুলত এখন আর চোখেই পড়েনা। মানুষ মালামাল বহনে জন্য এখন ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমনসহ নানা রকম গাড়ি। সেই সঙ্গে মানুষের যাতায়াতের জন্যও এখন রীতিমতো মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, অটোরিকশায় ভরপুর। যার ফলশ্রুতিতে গরুর গাড়ি পুরোটাই বিলুপ্তির পথে।
গরুর গাড়ি ধির গতিতে চললেও এটি ছিল পরিবেশ বান্ধব। ছিলনা জ্বালানি তেলের প্রয়োজন। কালো ধোঁয়ায় হতোনা মানবদেহের ক্ষতি। ধীরগতিতে চলায় এর দুর্ঘটনার ঝুঁকিও ছিল কম।
অনেকে নিজস্ব গরু দিয়ে চালাতেন এই গাড়ি। ফলে যাতায়াতের খরচও ছিল না তেমন।গরুর গাড়ির চালককে বলা হতো গাড়োয়ান। যেসব গরুর গাড়ি যাতায়াতের জন্য ব্যবহার হতো তার উপরে থাকত চাল। যাকে বলা হতো ছই।
যুগের পরিবর্তনে এই গাড়ির প্রচলন কমে গেলেও একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি আজও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও কোথাও কোথাওগরুর গাড়ি দেখা যায়। অনেকে মাঠ থেকে ফসল বাড়িতে আনার জন্য এই গাড়ি ব্যবহার করছেন। তাতে কৃষকের বাড়তি খরচও কমছে অনেকখানি।