প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ও জন নন্দিত কথা সাহিত্যিক মিজ রোকেয়া ইসলাম দৈনন্দিন জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝেও ভেষজ চা সম্পর্কে বলেন, প্রায় প্রতিদিন আমি নিজের হাতে এই চা তৈরি করি।
জীবন সচেতনতা এবং নিজের শরীর সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে একটু ইমোশনাল হয়ে উঠেন নন্দিত এই কথা সাহিত্যিক। আপন ফেইজবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, ভেতরের বহু পুরাতন খাঁচাটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। কোন কোন জায়গার বাঁধনও আলগা হয়ে গেছে।
নড়বড়ে খাঁচার উপরে চর্বি আর মাংসের পাহাড় তার উপর আগে হয়তো কিছুটা মোলায়েম ছিল এখন প্রতিদিন একটু একটু করে খরখরে হয়ে পুরানো কম্বলের মত চামড়াটা অনাদরে পরে আছে শরীরে। সেই শরীরটা বহন করছি আমি।
বদলে যাচ্ছে চুল চোখ নাক নকশা। দীর্ঘদিন কোমড়ের ব্যাথায় কাহিল ছিলাম। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে কবরসম যন্ত্রের ভেতর পুরো শরীর ঢুকিয়ে নানারকম বাদ্যবাজনায় পুরো আধঘন্টা সাবড়ে হাসিমুখে বাইরে এলাম বটে, জানতে পারলাম কোমড়ই নয় শুধু ঘাড়েরও দুটো হাড়ও মড়মড়ে হয়ে গেছে। ঘাড় তো মড়মড়ে হবেই, সারাজীবন ঘাড়ত্যাড়া স্বভাব ছিল আমার শেষ বয়সে নির্ভরযোগ্য অঙ্গ আমার,সে নিজেই ত্যাড়ামি শুরু করার পায়তারা করার সুযোগ তো নিতেই পারে।
মুড়মুড়ে খাঁচাটা কিছুটা ছাড় দিয়েছে এই কাজ চালিয়ে নেবার মত করে টিকিয়ে রেখেছে চর্বির বস্তামার্কা শরীরটা। এটাই পরম পাওয়া।
বয়সের বরফজমা কৌটো খুলে ফি বছর জল হয়ে ঝরে পড়ে খানিকটা। কৌটোর তলানিতে কতটা জল অবশিষ্ট আছে জানার উপায় নেই। নিঃশেষ না যৎসামান্য অবশিষ্ট আছে!
নাইবা জানলাম, এই বাড়তি পাওয়া সময়টুকু নড়বড়ে ঘুণেধরা শরীরটার যত্নে ইউটিউব দেখে আয়ুর্বেদ গ্রন্থের সাহায্যে নিজের থেকে কিছুটা যোগ করে এই চা তৈরি করি।
শুধু কি শরীরটাই আমার যদিও পুরোটা কখনও দেখা সম্ভব নয় তবুও তো কিছুটা দেখি কিছুটা দেখার বাইরে, দেখা অদেখার শরীরটাই আমি, এর ভেতরে আর কি কেউ আছে, কিছু কি আছে একান্ত আপন হয়ে। সেটা কি আমার মত। আমার ছায়া না শরীরটা তার মায়া।
তাকে তো কোনদিন ছুঁতে পারলাম না, পুরোপুরি অনুভব করতেও পারলাম না। সেও কি কখনও খাঁচার মত অসুস্থ হয়। তার যত্ন ভালবাসায় কি সময় দেই,? পরিচর্যায় কি কোন পদক্ষেপ থাকে,? সে তো পরমাত্মার সন্ধান চায় মিলনের আকাঙ্খা পোষন করে, আত্না আর পরমাত্মার খেলায় বিভোর হতেও কি চায় এই শরীর! আত্মা কি ভালবাসে পরমাত্মাকে। কোন আমি সেই ভালবাসায় মত্ত থাকি। ভেতরের আমি না বাহ্যিক আমি! থাক আমার আর পরমাত্মার খেলার কথা। বাহ্যিক শরীরটাকে আমি ভেবে ভালবাসি।
শুধুই কি শরীরটার যত্নে বেলাশেষে ভেষজ চা তৈরি করে পান করি । এই চায়ে কি হয়? আমার কোমড়ের হাড় বড় বড় চোখে তাকায় না, যখন তখন রগগুলো দাঁতমুখ খিচিয়ে দাঁড়ানো হাঁটাচলা বন্ধ করার হুমকি দেয় না, যদিও নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ ও খেরাপি চলছে, তবুও কেন যেন মনে হয় সকালের এই ভেষজ চা ঝড়ে পড়পড় ঘরটাকে শক্ত বাঁশ দিয়ে প্যালা দেবার কাজ করছে।
কফির ফুল পাতা ফল খেয়ে ছাগল যেভাবে লাফাতো কিম্বা চায়ের পাতায় মানুষ যেভাবে ফুরফুরে হয়ে ওঠতো, তেমন না হলেও সকালে দুইমগ চা পানের পর কেমন যেন ভাল লাগতে শুরু করে।
মুখের ভেতরটা খুব স্বাস্থ্যকর অনুভব হয়। নাতনিকে স্কুলে থেকে আনার জন্য স্কুলের গেটের দাঁড়িয়ে আকাশে তাকালে আকাশটার নীলকে এতো নিবিড় আপন মনে হয় ভেসে যাওয়া আদুরে মেঘগুলো মোহ দৃষ্টিতে তাকায় আমার দিকে, গাছের পাতাগুলো লাবণ্যময় হয়ে অনুভূতিতে পরশ বুলায়, যানজটে বসে থাকলেও অধৈর্য্য হয়ে পরিনা। মনে হয় এটাও ব্যস্ত জীবনের দৃশ্যরুপ। গেটের কাছে বসা অভিভাবকদের স্বামী সহবাসের গল্পও অন্যদিকে তাকিয়ে হজম করি। শাশুড়ী ননদের দুর্নামও সহনীয় হয়, মনে হয় ওরা জীবনের অপ্রাপ্তিগুলোয় মিথ্যা গালগল্পে সুখ খুঁজছে খুঁজুক না, আমার কি?
ভেষজ চায়ের কি এতো ক্ষমতা না আমার বয়স আমাকে এই বোধটুকু ঢেলে দিল অদেখা আত্নায়। এলোপ্যথিক ঔষধের কেমিক্যাল,ভেষজ দ্রব্যগুণ, খেরাপির কলাকৌশল এবং সর্বপরি আল্লাহর কাছে চাওয়া সবমিলিয়ে এই মূহুর্তে ভাল আছি।