অতীতে একতরফা ও গায়ের জোরে নির্বাচন করে দেশের বারোটা বাজানো হয়েছে—এমন মন্তব্য করে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, আমরা একতরফা ও গায়ের জোরে নির্বাচন করতে চাই না।
গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। সিইসি বলেন, ভোটের প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে ভোটকেন্দ্রে আনব। আমরা খাস নিয়তে ওয়াদা পালন করব। আমাদের চ্যালেঞ্জ একটিই, সেটা হলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের কাছে শপথ নেন সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনার। সেখান থেকে বেলা পৌনে ৩টার দিকে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়িতে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আসেন।
এ সময় নির্বাচন ভবনের নিচে অপেক্ষমাণ সচিবসহ ইসি কর্মকর্তারা তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। সেখান থেকে সিইসি ও অন্য কমিশনারদের কক্ষে নিয়ে যান কর্মকর্তারা। পরে সেখান থেকেই সংবাদ সম্মেলনে আসে কমিশন। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সিইসি বলেন, মানুষ এখন ভোটের নাম শুনলে নাক সিটকায়। কারণ তারা ভোটে দিতে পারেনি। এখানে ভোটারদের আগ্রহ বাড়াতে বা খাস নিয়তে যে কাজ, সেটা জানাতে আপনাদের (সাংবাদিক) সহযোগিতা লাগবে। আমরা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকব; কিন্তু ভালো কাজগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। ফলে আমরা উৎসাহিত হবো, কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
নির্বাচন কখন হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে কমিশন কাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সংস্কার হওয়ার পর নির্বাচন হবে। কেননা বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার প্রস্তাব আসছে। কেউ বলছেন সংসদের আসন ৪০০ করার কথা। কেউ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চাচ্ছে। কাজেই কোন পদ্ধতিতে, কীভাবে নির্বাচন হবে—সেই সংস্কার হলেই না সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলোর নির্বাচন নিয়ে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিতর্ক চলছে আওয়ামী লীগ নিয়ে তা আগে নিরসন হোক। আমরা তারপর সিদ্ধান্ত নেব।
আড়াই মাস পর নির্বাচন ভবনে নতুন কমিশনের মধ্য দিয়ে সংস্থাটির সাংবিধানিক শূন্যতা কাটল। সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন ৭৯ দিন পর গতকাল যোগ দিলেন নির্বাচন ভবনে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করলে ইসিতে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সংবিধান অনুযায়ী, কোনো কমিশন শপথ পাঠ করে দায়িত্ব নেওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হন।
এক্ষেত্রে অন্য কোনো সংকট সৃষ্টি না হলে পরবর্তী পাঁচ বছর এ কমিশন দায়িত্ব পালন করেন। হাবিবুল আউয়াল কমিশন পদত্যাগের পর গতকাল নতুন কমিশনের দায়িত্বভার গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই শূন্যতা কাটল। এ কমিশনের অধীনেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যায়।
নতুন সিইসি নাসির উদ্দীন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আসার আগ মুহূর্তে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলা হয়।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে তাদের সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা ছিল। এর মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা ও মধ্যাহ্নভোজের কারণে বিলম্বিত হয়।
বিকেল ৪টার দিকে কমিশনের দুই কর্মী নির্বাচন ভবনের পঞ্চম তলায় ওই সম্মেলন কক্ষে এসে দীর্ঘদিন ধরে দেয়ালে লাগানো শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিটি খুলে ফেলেন। পরে সাড়ে ৪টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।