ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া জয়লাভ করলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন—এমন তীব্র আশঙ্কায় ভুগছেন ইউরোপীয় নেতারা। এই উদ্বেগের মধ্যেই মহাদেশটির বিভিন্ন দেশ সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য গোপনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সরকারগুলো জনগণকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কীভাবে টিকে থাকতে হবে, সে বিষয়ে নানা পরামর্শ ও নির্দেশনা দিচ্ছে।
যুদ্ধের প্রস্তুতি ও জনসচেতনতা: বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ আসন্ন যুদ্ধের সম্ভাবনায় নিজ নিজ জনগণকে প্রস্তুত করছে। ‘যুদ্ধ দোরগোড়ায়’ এমন ধারণাকে সামনে এনে নাগরিকদের সতর্ক করা হচ্ছে। কিছু দেশ যুদ্ধের সময় বেঁচে থাকার কৌশল নিয়ে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে এবং ইউক্রেনের জনগণের মতো ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানাচ্ছে। গণ উদ্ধার মহড়া পরিচালনা এবং খাদ্য মজুদের মতো বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি বেশ কিছু বাস্তব পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। গ্যারেজ বা পাতাল রেল স্টেশনগুলোকে জরুরি প্রয়োজনে বাংকারে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ন্যাটো ও ইইউ’র নির্দেশনা: ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট গত ডিসেম্বরে ব্রাসেলসে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে যুদ্ধকালীন মানসিকতা নিয়ে প্রস্তুত থাকার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এর জন্য সবার আগে জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় কমিশন সদস্য দেশগুলোকে ৭২ ঘণ্টার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে, যা গত মার্চে প্রকাশিত এক নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়। শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নয়, এর সদস্যভুক্ত দেশগুলোও প্রায়শই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করছে।
বিভিন্ন দেশের পদক্ষেপ: জার্মানি গত জুন মাসে তাদের সামরিক প্রতিরক্ষা নির্দেশিকা হালনাগাদ করেছে। এতে ইউরোপে সংঘাত শুরু হলে জনগণের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সুইডেন ‘যদি যুদ্ধ আসে’ (If War Comes) শিরোনামে একটি টিকে থাকার নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এতে যুদ্ধের সময় সতর্কতা, ঘরবাড়ির পরিবেশ কেমন রাখা উচিত এবং বিমান হামলার সময় করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জার্মান মার্শাল ফান্ডের ট্রান্সআটলান্টিক সুরক্ষার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া মেজর সিএনএনকে বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর এই প্রস্তুতিমূলক পরামর্শ ও পদক্ষেপকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। তিনি মনে করেন, কেবল রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসন নয়, যেকোনো ধরনের যুদ্ধের জন্যই জনগণের প্রস্তুত থাকা জরুরি।